• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

মঠবাড়িয়ায় এশিয়ার সবচেয়ে বড় কালী প্রতিমার পূজা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২০  

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুররের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর মঠবাড়িয়া গ্রামের নির্মল চাঁদ ঠাকুর বাড়িতে ৯০ ফুট (৬০হাত ) উচ্চতার বড়দা কালি প্রতিমার পূজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সরস্বতী পূজার আগের দিন রাত থেকে ৫ দিন ব্যাপী এ বড়দা কালী পূজা ও ও স্বরস্বতী মায়ের উৎসব ঘিরে দেশের দুর দুরান্ত হতে  লক্ষাধিক মানুষের পদচারণা ঘটে।
 

বুধবার (২৯ জানুয়ারী) দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া এ বিশালাকৃতির কালি প্রতিমার পূজা অনুষ্ঠান আগামী রোববার শেষ হবে।  উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়িয়া গ্রামের নির্মল চাঁদ সাধু ঠাকুর বাড়ির শ্রী শ্রী হরি মন্দির প্রাঙ্গনে এ বিশালাকৃতির কালি প্রতিমার ৫ দিন ব্যাপী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার দিবাগত রাত থেকে  ৫ দিনের এ পূজা অনুষ্ঠান আগামী এক সপ্তাহ জুড়ে এখানে উৎসবের আমেজ চলবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এ বিশালকৃতির প্রতিমা দর্শণে দেশের দূরদুরান্ত হতে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মালম্বী ভক্তবৃন্দসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী মানুষও এ উৎসব স্থলে সমবেত হচ্ছেন।
 

মন্দিরের সেবায়েত শ্রী সন্তোষ মিস্ত্রী জানান, গত ৩০ বছর ধরে  প্রতিবছর স্বরস্বতী পূজার একদিন আগে এ ঐতিহ্যবাহী কালি পূজা শুরু হয়ে টানা ৫ দিন উৎসব চলে। ১৯৯০ সালে তিন ফুট উচ্চতার কালি প্রতিমা দিয়ে এ মন্দির প্রাঙ্গনে পূজা শুর হয়। প্রতিবছর প্রতিমার উচ্চতা বাড়তে বাড়তে এবার ৯০ ফুটের প্রতিমা নির্মিত হয়। এছাড়া ৯৫ ফুট লম্বা মহাদেব প্রতিমাও নির্মাণ করা হয়েছে। এ বড়দা কালি পূজা উৎসব ঘিরে উৎসবস্থলে মেলাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
 

কালি পূজার আয়োজক হরি চাঁদ ঠাকুর মন্দিরের ধামকর্তা শ্রী নির্মল চন্দ্র চাঁদ ঠাকুর জানান, ৩০ বছর ধরে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একবার গায়ে জলবসন্ত রোগে মহামারী দেখা দেয়। এসময় গায়ের মানুষ এ রোগে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানীও ঘটে। হরি মন্দিরের সেবায়েত স্বপ্নে কালি পূজা দেওয়ার জন্য নির্দেনা পান। এরপর কালি পূজার আয়োজন করা হয়। এ পূজার প্রসাদ খেয়ে সেদিন জলবসন্তের মহামারি থেকে গ্রামবাসি আরোগ্য লাভ করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর গায়ের মানুষের সকল বালা মুছিবত রোগ শোক দুর করতে  এ কালি পূজার আয়োজন চলে আসছে। তিনি আরও জানান, এ পূজায় ভক্তবৃন্দরা সহযোগিতা করে ৫ দিনের উৎসব পালন করে। প্রতিবছর প্রতিমা আকারে বড় করা হয়। এবার ৯০ ফুট উচ্চতার কালি প্রতিমা তৈরী করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৮৪ ফুট। পূজায় সংকটাপন্ন মানুষের নানা মানত দিয়েই এ আয়োজন চলছে। সপ্তাহ ধরে এখানে অব্যহতভাবে কবিগান, মন্ত্রপাঠ ও শ্যামা সঙ্গীত অনুষ্ঠানসহ  প্রসাদ বিতরণ করা হয়। তিনি আরও জানান ৩০জন গুণরাজ(প্রতীমা শিল্পী)  আড়াই মাস ধরে  এ বিশালাকৃতির প্রতিমা নির্মাণ করেছেন। এতে প্রায় ৫  লাক্ষাধিক টাকা ব্যায় হয়েছে। এ কালি প্রতীমা বিশালাকৃতির প্রতিমা কেবল একটি সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবে নয় অন্য ধর্মালম্বী মানুষরাও এ মাঙ্গলিক উৎসবে সমবেত হয়। জীবনের যাবতীয় সংকট থেকে মুক্তির আশায় এখানে সবাই আসে।
 

প্রতিমার প্রধান কারিগর বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ভাস্কর নিত্যানন্দ হালদার জানান, তিনি গত ১৭ বছর ধরে প্রতিবছর এখানে এ কালি প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন। এবছর তিনি ৯০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা নির্মাণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এশিয়ার মধ্যে এত বড় উচ্চতার কালি প্রতীমার পূজার আয়োজন করা হয় কিনা আমাদের জানানেই। এ প্রতিমা নির্মাণে বাঁশ,নলের কঞ্চি,মাটি,কাঠের গুড়ি ও খড় ব্যবহার করা হয়েছে ।
 

মঠবাড়িয়া সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান এবিএম ফারুক হাসান বলেন,এতবড় কালী প্রতীমা এশিয়ার  কোন দেশে আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই এটাই এশিয়ার সবচেয়ে বড় কালি  প্রতীমা। এ পূজা ঘিরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া এ প্রতিমা মানুষ দর্শণের জন্য আসছেন বিদেশীরাও।