• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

মানসিক অস্থিরতা এবং দুশ্চিন্তা দূর করার আমল

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

প্রাত্যহিক জীবনে আমরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হই। আর এসব সমস্যা আপনা-আপনিই আমাদেরকে চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে। এসব বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তাই দুশ্চিন্তায় রূপ নেয়। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, হতাশা ভর করতেই পারে আমাদের।

এই মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করার চিকিৎসা বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে বিশ্বনবীর নির্দেশনা। এ বিষয়ে হাদিস শরিফে কিছু দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা প্রিয় পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।

(১) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সা.) দুশ্চিন্তা, পেরেশানির সময় এই দোয়া পড়তেন। ( মুসলিম শরিফ ২০৯২)।

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِیْمُ الْحَلِیْمُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِیْمُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْکَرِیْمُ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আযীমুল হালীম,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুল আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রব্বুল আরদ্বি ওয়া রব্বুল আরশিল কারিম।

অর্থ: ওই আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই যিনি মহান এবং সহনশীল, ওই আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই যিনি আরশে আলিমের মালিক, ওই আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই যিনি আসমান, জমিন এবং মহা আরশের মালিক।

(২) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযি.) বর্ণনা করেন যে- তিনি বলেন, নবী করিম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি কেউ কখনো দুশ্চিন্তা বা বেদনায় আক্রান্ত হয় এবং সে যদি এ দোয়াটি পড়ে, তাহলে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন, বেদনা অপসারণ করে দেবেন। এর বদলে প্রশান্তি আনয়ন করে দেবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি দোয়াটি শিখে নেব না? তিনি বললেন, অবশ্যই! যে ব্যক্তি দোয়াটি শুনেছে তার উচিত এটি শিখে নেয়া। ( মুসনাদে আহমদ ৩৫২৮ সহিহ তারগীব: ১৮২২)।

اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ ، وَابْنُ عَبْدِكَ ، وَابْنُ أَمَتِكَ ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي ، وَنُورَ صَدْرِي ، وَجِلاءَ حُزْنِي ، وَذَهَابَ هَمِّي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনার বান্দা ও বান্দীর সন্তান। আমার নসিব আপনার হাতে। আমার ওপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার প্রতি আপনার ফয়সালা ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমি সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির বদৌলতে আপনার নিকট কাতর প্রার্থনা জানাই— যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন অথবা নিজ কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টিজীবের মধ্যে কাউকে শিখিয়ে দিয়েছেন অথবা স্বীয় ইলমের ভাণ্ডারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন- কোরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি বানিয়ে দিন, আমার বক্ষের জ্যোতি বানিয়ে দিন, আমার দুশ্চিন্তাগুলোর অপসারণকারী বানিয়ে দিন এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিদূরণকারী বানিয়ে দিন।

(৩) আবু বাকরা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে, (ইমাম আবু দাউদ ‘সুনান’ গ্রন্থে (৫০৯০) ও ইমাম আহমাদ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (২৭৮৯৮)

اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو ، فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْن وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার দয়া প্রত্যাশা করছি। সুতরাং চোখের পাতা ফেলার মতো সময়ের জন্যেও আপনি আমাকে আমার নিজের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আমার যাবতীয় বিষয় আপনি ঠিক করে দিন। আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই।

(৪) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেবেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.) এর এর দোয়া। (তিরমিযী ৩৫০৫)। দোয়াটি হলো-

لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ যলিমীন।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী ৩৫০৫)।

(৫) আবু সাঈদ খুদরী রাযি. হতে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু উমামা (রাযি.)-কে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিক্ষা দেব না, তুমি যদি তা পাঠ কর, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমার দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ! হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে তা শিক্ষা দিন। তিনি বললেন, সকাল ও বিকালে তুমি পাঠ করবে।

আবু উমামা (রাযি.) বলেন, আমি এই দোয়াটি পাঠ করলাম। এতে আল্লাহ তায়ালা আমার যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর করে দিলেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিলেন। (বুখারী, ৭/১৫৮, নম্বর: ২৮৯৩; আরো দেখুন, বুখারি, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩)।

اللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وأعوذبك من َالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأعوذبك من الْجُبْنِ الْبُخْلِ وَغلبة الدَّيْنِ وَ قَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি।

অর্থ:  হে আল্লাহ! আমি উদ্বিগ্ন ও বিষণ্ণ হওয়া থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অক্ষম ও আলস্য হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা করা ও ভীরু হওয়া থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঋণের আধিক্য এবং পুরুষদের অন্যায় প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

(৬) বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া:

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাউয়ুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ: ‘আমি ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে যিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক-বাহক আর আমি তার দিকেই প্রত্যার্বন করি।’ 
ইয়া রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা! আমাদের বিপদ-আপদ ও বিভিন্ন পেরেশানিতে উক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।