• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:

মুসলমানের কাফনের রং সাদা কেন

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২০  

ইসলামে মৃত মানুষের পোশাক সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তিকে সম্মানজনকভাবে কাফন-দাফন করতে হয়। কাফনের পোশাক সাদা হওয়া উত্তম। তার মানে এই নয় যে অন্য রঙের কাপড় দিয়ে কাফন পরানো যাবে না। তবে হ্যাঁ, সাদা রঙের কাপড়ে কাফন পরানো উত্তম। কেননা রাসুল (সা.)-এর প্রিয় রং ছিল সাদা। তিনি সাদা রঙের পোশাক ব্যবহার করা পছন্দ করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরও যেন সাদা কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া হয়। কেননা সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস ৫২)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের পোশাক পরো। কেননা তোমাদের জন্য তা সবচেয়ে উত্তম পোশাক। আর তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের এটা দিয়েই কাফন দাও। (তিরমিজি, হাদিস ৯৯৪)

কিন্তু কেন এই রং ব্যবহার করা উত্তম? আসলে এর মূল কারণ এটাই যে এটি মহানবী (সা.)-এর আদর্শ। তা ছাড়া সাদা বিশুদ্ধ ও পূর্ণতার রং। সাদা রঙের অর্থ বিশুদ্ধতা, নির্দোষ, পূর্ণতা ও সম্পূর্ণতা। সাদা রং মনকে স্পষ্ট ও বিশুদ্ধ করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়। এ ছাড়া সাদা পরিতৃপ্তি, বিশুদ্ধতা, জন্ম, সরলতা, পরিচ্ছন্নতা, শান্তি, নম্রতা, নির্ভুলতা, শীতকালীন, বরফ, ভালো, জবরদস্তি, বিবাহ (পশ্চিমা সংস্কৃতি), ঠাণ্ডা প্রভৃতি ভাব প্রকাশে সাহায্য করে। তাই ইসলামে সাদা পোশাকের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কেও সাদা কাপড়ে কাফন পরানো হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে তিনটি ইয়েমেনি সাহুলি সাদা সুতি বস্ত্র দিয়ে কাফন দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কামিস ও পাগড়ি ছিল না। (বুখারি, হাদিস ১২৬৪)

এ জন্য প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে মৃত মানুষকে কাফন পরানোর ক্ষেত্রে সাদা পোশাক পরানোর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তবে এ বিষয়টিও স্মরণ রাখতে হবে যে অন্য রঙের কাপড় দিয়ে কাফন পরানো নিষিদ্ধ নয়। বরং ইসলাম চায় এমন কাপড় দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো হোক, যা মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রকাশে সহায়ক। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী করিম (সা.) খুতবা দিতে গিয়ে তাঁর সাহাবিদের মধ্যে জনৈক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি মারা গেলে তাঁকে অপর্যাপ্ত কাপড়ে কাফন দেওয়া হয় এবং তাঁকে রাত্রিবেলা কবর দেওয়া হয়। নবী করিম (সা.) আমাদের এই বলে তিরস্কার করেন যে কেন তাকে রাত্রিবেলা দাফন করা হলো। অথচ তিনি তাঁর জানাজা পড়তে পারলেন না। বরং কোনো মানুষ নিরুপায় না হলে এরূপ করা ঠিক নয়। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দেবে, সে যেন ভালো কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে। (মুসলিম, হাদিস ২০৭৪)

এ সব কিছু বিবেচনা করে ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তিকে সাদা ও ভালো কাপড়ে কাফন পরিয়ে দাফন করা হয়। এটি মানবীয় মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের একটি পদক্ষেপ।