• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

রমজান ও রোজা বিষয়ক প্রচলিত ভুলের সঠিক সমাধান

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২০  

 

জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায়যোগ্য আমল। এ ধারণা ঠিক নয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্রবছর অতিবাহিত হলেই সেই সম্পদের জাকাত দেয়া ফরজ। জাকাত ফরজ হওয়ার পর দ্রুত আদায় করতে হবে।
জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায়যোগ্য আমল। এ ধারণা ঠিক নয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্রবছর অতিবাহিত হলেই সেই সম্পদের জাকাত দেয়া ফরজ। জাকাত ফরজ হওয়ার পর দ্রুত আদায় করতে হবে।

ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম পবিত্র রমজান মাসে আমল-ইবাদতের প্রতি মুমিন-মুসলমানদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি থাকে। তদুপরি সাধারণ সময়ের মতো পবিত্র এ মাসেও নানাবিধ ভুলত্রুটি হয়ে যায়।
রমজান ও রোজা নিয়ে মুসলিম সমাজে আমল-ইবাদতগত নানান শুদ্ধ প্রথা ও রীতি-রেওয়াজ প্রচলিত থাকার পাশাপাশি কিছু ভুল প্রচলনও রয়েছে। নিচে রমজান ও রোজা নিয়ে মুসলিম সমাজ-পরিবারে জড়িয়ে থাকা কিছু প্রচলিত ভুলের কথা ও সঠিক সমাধান তুলে ধরা হলো-

রোজার নিয়তকে মুখে উচ্চারণ করাকে জরুরি মনে করা: রোজার নিয়ত নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা কাজ করে। অনেকেই মনে করেন, রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হয়। সমাজে যে আরবি নিয়ত প্রচলিত আছে তা বলতে হয়, নইলে কমপক্ষে মুখে এতটুকু বলতে হয় যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি। অন্যথায় রোজা সহিহ হবে না—এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোজার সঙ্কল্প করাই যথেষ্ট।

রোজাদারের খাবারের কোনো হিসেব হবে না এমনটা ভাবা: কোনো কোনো মানুষকে বলতে শোনা যায়, রোজাদারের খাবারের কোনো হিসেব হবে না। এটি একটি ভুল কথা। খাবারের হিসেব বলতে সাধারণত খাবারের অপচয় বোঝায়। আর কোরআন-হাদিসে এমন কোনো কথা নেই যে, রোজাদার যদি খাবারের অপচয় করে তাহলে তার কোনো হিসেব হবে না। যে ব্যক্তিই খাবার বা যেকোনো বস্তুই অপচয় করুক আল্লাহর দরবারে তাকে এর হিসেব দিতে হবে। এ ছাড়াও পানাহারের ক্ষেত্রে হারাম থেকে দূরে থাকা ফরজ। প্রচলিত এ বাক্য শুনে হারাম খেলেও কোনো হিসেব নেই—এমনটা ভাবা আরো ভয়াবহ।

জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায় করতে হয় এমনটা ভাবা: অনেক মানুষ মনে করেন যে, জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায়যোগ্য আমল। এ ধারণা ঠিক নয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্রবছর অতিবাহিত হলেই সেই সম্পদের জাকাত দেয়া ফরজ। জাকাত ফরজ হওয়ার পর দ্রুত আদায় করতে হবে। কিন্তু কোনো কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায়, তাদের জাকাতবর্ষ রমযান মাসের আগে, এমনকি ৪-৫ মাস আগে হয়ে যায়। এরপরও তারা তখন জাকাত আদায় করেন না; বরং রমজানের অপেক্ষা করতে থাকেন। এমন করা আদৌ উচিত নয়। 

সেহরি ত্বরান্বিত করা এবং ইফতার বিলম্বিত করা অথবা সেহরি না করা অথবা মধ্যরাতে তা খাওয়ার মাধ্যমেই যথেষ্ট মনে করা: এসব কাজই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকনির্দেশনার পরিপন্থি। কারণ মুস্তাহাব হলো, রোজাদার সেহরি খাবে। এ ছাড়া নবুয়তের চরিত্রের তিনটি আদর্শ হলো, ইফতার ত্বরান্বিত করা, সেহরি বিলম্বিত করা এবং সালাতে ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখা। (তাবরানি)।

রোগীর কষ্ট বা ক্ষতি হওয়া সত্তেও রোজা রাখাকে জরুরি ভাবা: এটা ভুল। কারণ সত্য হলো, আল্লাহ তায়ালা অসুস্থের জন্য রোজা ভাঙার ও পরবর্তীতে তা কাজা করার অনুমতি দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْیَصُمْهُ ؕ وَ مَنْ كَانَ مَرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ 

‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সূরা: বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)।

ইফতারির সময় আজানের উত্তর না দিয়ে ইফতারিতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া: আজানের উত্তর দেয়া আমাদের জন্য জরুরি। ইফতার বিলম্বিত করে করতে হবে এমন ধারণা ভুল, কল্যাণের সঙ্গে থাকতে হলে ইফতার তাড়াতাড়ি করতে হবে। (বুখারি : হাদিস-১৯৫৭)। ভুলসমূহের মধ্যে এটাও যে, কিছু রোজাদার মাগরিবের আজান অনুসরণ (উত্তর দেয়া ত্যাগ) করে ইফতারে ব্যস্ত হয়ে যায়। আর এটি ভুল; কেননা রোজাদার এবং বেরোজাদার সবার জন্যই সুন্নত হলো মুয়াযজিনের (আজান) অনুসরণ করা এবং সে যা বলে তাই বলা। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা ডাক (আজান) শোনো, তবে তোমরা বলো যেরূপ মুয়ায্জিন বলেন। (বুখারি ও মুসলিম)। আর মুয়াজযিনকে অনুসরণ করতে হবে ইফতার করার সঙ্গেও। কারণ, মুয়াযজিনকে অনুসরণ এবং আজান বলার সময় খাওয়ার থেকে নিবৃত্ত থাকার কথা বর্ণিত হয়নি। আল্লাহই অধিক জানেন।

পানীয় দ্বারা ইফতারি শুরু করাকে জরুরি মনে করাটি ভুল: ইফতারিতে সুন্নত নিয়ম হলো খেজুর দিয়ে শুরু করা; কেননা তা বরকতময় আর খেজুর যদি না থাকে, তবে পানি দিয়ে ইফতার করা যাবে যেহেতু তা পবিত্র। (আবু দাউদ, ২৩৫৬-পৃষ্ঠা)।

রমজানে চোখে সুরমা কিংবা ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়: এরূপ ধারণা করা ভুল। সুরমা ড্রপে রোজা ভঙ্গ হয় না। (রদ্দুল মুহতার-৭/৩৭৯৫)।

রমজানের ২৭তম রাতকে নির্দিষ্টভাবে শবে কদর ভাবা: এমন ভাবনা ভুল। রমজানের শেষে দশ রাতের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করতে হবে। এই কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। (সূরা: কদর, আয়াত: ৩)।

রোজাবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন বা টিকা গ্রহণ করে রোজা ভেঙে গেছে ধারণা করা: এটি একটি ভুল ধারণা। এমনকি গ্লুকোজ ইনজেকশনের দ্বারাও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (ফাতওয়ামে উসমানী-২/১৮৬)।

ইচ্ছা ব্যতীত বমি হয়েছে বিধায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে এরূপ মনে করে রোজা ভেঙে ফেলা: এটাও রোজা বিষয়ক প্রচলিত ভুল। বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোজা ভাঙবে না। (জামে তিরমিযী ১/১৫৩)।