• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার ছিল দেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার অপচেষ্টা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২১  

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১১ জুন) রাতে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঞ্চালনা‘গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিগত তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি। তিনি মুক্তি পেয়ে দেশর হাল ধরেছেন। 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের ৭৩তম এই আলোচনা পর্বে অংশ নেন - বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার-এর পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, ইউজিসি-র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও সাংবাদিক আলী হাবিব।

সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১১ই জুন, ২০০৮ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। সেই করাগারের যাওয়ার প্রেক্ষাপট, কারাগারে যাওয়ার কারণ, উদ্দেশ্য ও রাজনৈতিক নিপীড়নের যে শিকার তিনি হয়েছিলেন, সেসব নিয়ে আলোচনা করবেন সম্মানিত আলোচকবৃন্দ।

আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, যে ১/১১ সরকার যখন আমাদের ঘাড়ে চেপে বসলো, গণতন্ত্রকে হত্যা করবার জন্যে এবং রাজনীতিকে কলুষিত করবার জন্য, নিষিদ্ধ করবার জন্য- তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো এবং অদ্ভুত, অবাস্তব মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়। মাইনাস টু ফর্মূলার কথা বলা হয়, আসলে করছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মূলা- শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ ও রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া।

সূচনা বক্তব্যে সম্প্রীতি সংলাপের সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল বলেন, আজকের আমাদের সংলাপের শিরোনাম হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস’। আমরা এবং বাংলাদেশ আজকের দিনটিকে সেভাবেই দেখি। আমার কাছে এই দিনটি ১৫ আগস্টের চেয়ে কোনো অংশের চেয়ে কম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে দিনটিতে মিথ্যা অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছিল, সেদিনটি আমার কাছে ১৫ আগস্টের মতোই গুরুত্ববহ। ১৫ আগস্ট বড় প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে এসে দেশটির যখন হাল ধরেছিলেন, সেই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন সর্বশেষ প্রয়াস। 

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে যদি রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত করা যায় তাহলে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে একটা ভাগাড়ে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। আমরা ২১শে আগস্ট দেখেছি হয়তো ২০০৮ সালের বৈশ্বিক বাস্তবতায় ১৫ আগস্ট ও ২১ আগষ্টের মতো ঘটনা সংঘঠিত করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এটি নেত্রীর উপর, বাংলাদেশের উপর বড় আঘাত ছিল এবং আজকে সত্যি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি পেয়েছিল। শেখ হাসিনার মুক্তির পরের ঘটনা প্রবাহ সবার সামনে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং একের পর এক গৌরবমালা বাংলাদেশের বিজয়াঙ্গনে যুক্ত হচ্ছে।

লন্ডন থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, অনেকেই কারাগার থেকে মুক্ত হয়- বঙ্গবন্ধুও হয়েছেন কয়েকবার। উনি যখন শেষবার কারাগার থেকে মুক্ত হন তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমেদ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু বহুবার জেল থেকে বেরিয়েছিলেন কিন্তু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বের হওয়াটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে মহাত্মম ও নিঃসগমন। তা শুধু বাংলাদেশকেই স্বাধীন করার পথ উন্মুক্ত করেনি, পাকিস্তানেও দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল।’ এটা পাকিস্তানীরাও স্বীকার করে। ঠিক তেমনি ১১ জুন তারিখে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাও একদিন মুক্তিলাভ করেছিলেন কিন্তু এই মুক্তিলাভটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তি একসঙ্গে তিনটি ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছে। একটা ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার শাসনকে ফিরিয়ে আনা, দুই নম্বর ছিল খালেদা জিয়া যখন নেত্রী হিসেবে ব্যর্থ, দল ব্যর্থ এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমাদের উদীয়মান, বিত্তশালীদের কাছে, এলিটদের কাছে, সুশীল সমাজের কাছে, এমনকি সেনাবাহিনীর কাছে এটা প্রমাণ হয় যে খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশটা এগুবে না। সেজন্যই তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকী রইলেন শেখ হাসিনা, তারা জানতেন শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম, ছোটকাল থেকে রাজনীতি করেছেন এবং তিনি দেশ চালাতে পারবেন। তাকে সরাতে হলে অন্য ফর্মুলা দরকার। সেজন্য আসে মাইনাস টু ফর্মুলা, যেটাকে আমি বলি ইউনুস-কামাল ফর্মুলা। তৃতীয় যেটা ছিল, সেটা আরও কঠোর। জেনারেল মইন সাহেব একটা দল গঠন করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জেনারেল মইন প্রেসিডেন্ট হবেন এবং একজন সিভিলিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী করে আধা-সামরিক সরকার গঠন। এই তিনটা ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা মুক্তিলাভের পরে ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনাকে ইচ্ছা করেই মুক্তি দেওয়া হয়নি, দেশের পরিস্থিতি এমনভাবে ঘুরে গেল যে শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ উদ্ধার করার কেউ ছিল না। এমনকি সামরিক বাহিনীও বুঝতে পেরেছিল, তারাও ক্ষমতা নিয়ে আর এগুতে পারবে না। প্ল্যানটা ছিল এ রকমই। আমার বিশ্লেষণ কতটা খাটি, কতটা মেকি বলতে পারবো না। 

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব ব্যর্থ হয় তারা অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে সামনে খাড়া করে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেও কোনো কিছু সামলাতে পারলো না তখন বিএনপি চেয়েছিল একটা রক্তপাত। আর্মির একদল ক্ষমতালিপ্সুরা চেয়েছিল খালেদাকে বাদ দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি করা যাতে লোকরা মনে করে তারাই এখন দেশের একমাত্র ইস্যু। এর ফাঁকে ড. ইউনুস-ড. কামালের গুড গর্ভানেসের নামে সুশীল সমাজের একটা দল গঠন করার কথা ছিল। ড. ইউনুস সাহেব প্রধানমন্ত্রী, কামাল সাহেব প্রেসিডেন্ট- এই ধরনের একটা ফর্মুলা তারা তৈরি করেছিল। নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে সরানো যাবে না মনে করে ১/১১ সরকারটা তারাই এনেছিলেন। আমি এটাকে মিলিটারি ক্যু বলি না, এটাকে সিভিল ক্যু বলি। এজন্য যে ফখরুদ্দিন এবং মইনের ক্ষমতা গ্রহণের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কয়েকটা বড় এনজিও, দুটি নিরপেক্ষ পত্রিকা। এদের উদ্দেশ্য ছিল হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে এখানে একটা অনির্বাচিত সিভিল সরকার গঠন করা। সেখানে ইউনুস-কামাল ক্ষমতায় আসবে। শেখ হাসিনার মুক্তিলাভ, এই তিনটি ষড়যন্ত্র হয়ে যায়। যদি বেরিয়ে আসতে না পারতো দেশের কপালে অত্যন্ত দুঃখ ছিল। তাতে ইউনুসের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, ডা. কামাল হোসেনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, বিএনপির সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে।
 
প্রবাসী এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আমি একদিক থেকে ১/১১ এর সরকারকে বলি একতরফা। সবাই মিলে ১/১১ সরকারকে দোষারূপ করে কিন্তু আমি মনে করি ইয়াজউদ্দিনের হাত থেকে ক্ষমতা না নিলে গৃহযুদ্ধ হতো। ভয়াবহ রক্তপাত হতো। এই রক্তপাত থেকে ১/১১ সরকার আমাদের দেশটাকে বাঁচিয়েছে। এজন্যে এ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন শেখ হাসিনা এই সরকারের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরে এরা আস্তে আস্তে বিপদগামী হয়। এই সরকারের যে প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন, যে কথা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল কিন্তু আবার পেছন থেকে কলকাঠি শুরু হয়। এদেরকে স্থায়ী করার জন্য। যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন সামরিক-বেসামরিক, তারা দুর্নীতিবাজ হয়ে পড়ে। অতি উচ্চাঙ্ক্ষী হয়ে উঠে। এদের মধ্যে সিভিল সার্ভিসের আকবর আলী একজন, তিনি নানা তথ্য দিয়ে, নানাভাবে এই সরকারকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনাকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্রে আমার সন্দেহ আকবর আলী খানও ছিল।

আমি বলি যে, তার মাথায় হুলিয়া, তাকে বিদেশি পাঠিয়ে দেশে আসতে না দেওয়া, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়া। সমসাময়িককালের কোন নেত্রী বা নেতা এতো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেনি। তাকে সাব-জেলে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে তার খাবারে বিষ দেওয়া হচ্ছিল। স্লো পয়জনিং, যেটা ড. মোদাচ্ছের আলি গিয়ে ধরেন এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেন। নানাভাবে চেষ্টা চলছিল, তাকে মারার কম চেষ্টা হয়নি। চট্টগ্রামে একবার মারার চেষ্টা হয়েছিল, গ্রেনেড হামলা করে মারার চেষ্টা করা হয়েছে, তারপরে সাব-জেলে নিয়ে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু হাসিনা প্রতিবারই সে নীলকণ্ঠের মতো বেরিয়ে এসেছে। সমস্ত বিপদ নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন, বেড়িয়ে এসেছেন, দেশে আবার গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্য বলা যেতে পারে, ১১ জুনকে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের দিবস। যেটা আজকে আপনারা পালন করছেন।

এই দিনটি না এলে, শেখ হাসিনা এই দিনে মুক্ত না হলে ১/১১ সরকার অপসারিত হতো এবং সেখানে হয় খালেদা জিয়া না হয় কামাল হোসেন চক্র ক্ষমতায় আসতো এবং দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। শেখ হাসিনার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বার বার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশটাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিয়েছেন। তবে সব সরকারের ব্যর্থতা থাকে, এই আওয়ামী লীগ সরকারেরও আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার বক্তব্য ১১ জুন তারিখে যদি শেখ হাসিনা মুক্ত না হতেন তাহলে দেশ তিনটি ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারতো না। 

প্রসঙ্গত, প্রায় এক ঘন্টা ১৩ মিনিট ধরে আয়োজনটি দেখা যাবে- https://www.facebook.com/sampritee.bangladesh এই লিংকে। একইসঙ্গে দেখা যায় একুশে টেলিভিশনের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/Ekushey24online)-এ।