• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে বাসভবনে, কথা শুনলেন বঙ্গবন্ধু

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদমজী জুটমিলের শ্রমিকদের প্রতি উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান। সবকিছু ঠিক করতে আগামীতে মিলের সমস্যার প্রতি তার ব্যক্তিগত দৃষ্টি থাকবে বলে শ্রমিকদের আশ্বাসও দেন।


প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ২৬ নভেম্বর বিকালে ধানমন্ডির বাসভবনের সামনে সমবেত আদমজী জুটমিলের বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের সমস্যা জানানোর উদ্দেশ্যে শ্রমিকরা মিছিল করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হাজির হন। শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে জমায়েত হয়ে প্রিয় নেতা ও জাতির পিতার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বঙ্গবন্ধু ঘর ছেড়ে তাদের কাছে আসেন। বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে ‘বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় শ্রমিকরা। বঙ্গবন্ধু আলোচনায় বসার জন্য শ্রমিকদের প্রতিনিধি পাঠাতে বলেন। এরপর শ্রমিকরা কয়েকজন প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ভেতরে পাঠান। প্রায় আধঘণ্টা তারা কথা বলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে এসে শ্রমিকদের সামনে বলেন, আমি আপনাদের প্রতিনিধিদের কথা শুনেছি। আপনারা কাল থেকে বেশি উৎপাদন আমাকে উপহার দেবেন, এটাই চাই। বাকি বিষয়গুলোর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে দৃষ্টি রাখবেন এবং উৎপাদন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণেরও আশ্বাস দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, আগামীতে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করবো। শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আশ্বাসকে স্বাগত জানায়।

 

বঙ্গবন্ধু হঠাৎ গণভবন স্টাফ কোয়ার্টারে
১৯৭২ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হঠাৎ গণভবন সংলগ্ন স্টাফ কোয়ার্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি কর্মচারীদের  খোঁজ-খবর নেন। বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনের নিম্নপদস্থ কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। কর্মচারীরা এমন আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের মাঝে পেয়ে যেমন অবাক হন তেমন আনন্দ পান। কোয়ার্টারের এক জায়গায় গোশত রান্না হচ্ছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে গোশত খেতে দেওয়া হয়। গণভবনের গেটে সমাবেশে জনতার সাথে বঙ্গবন্ধু মিশে যান, তাদের সাথে আলাপ ও করমর্দনও করেন।


পিন্ডি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের উদ্বেগ
মানবতার খাতিরে পাকিস্তানি আটক বাঙালিদের পরিবার-পরিজনদের (মহিলা ও শিশুদের) দেশে ফেরার সুযোগদানের যে অনুরোধ ভারত-বাংলাদেশ করেছিল সেই অনুরোধ রক্ষায় পাকিস্তানের ব্যর্থতায় ভারত ও বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে। ১৯৭২ সালের ২৬ নভেম্বর বাসস এ খবর জানায়। খবরে বলা হয়, আটক পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দি, অন্তরীণ বেসামরিক ব্যক্তিদের পরিবার পরিজনদের পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাকিস্তানি অভিমত জানার জন্য নয়াদিল্লির দূতাবাসকে অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে আটক বাঙালিদের পরিবারকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার ব্যাপারে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র দফতর এই মর্মে একটি ঘোষণা প্রচার করে, পাকিস্তান প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১০ হাজার বাঙালি মহিলা শিশুকে বাংলাদেশে ফেরত আনার সুযোগদানের পাকিস্তানি সিদ্ধান্তের কথা ভারত ও বাংলাদেশ সরকার জানতে পেরেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দুঃখের সাথে জানায় যে, মানবতার দিক থেকে বিবেচনা করে সমস্ত আটক বাঙালিদের পরিবার-পরিজনদের ফেরতদানের বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রস্তাবে পাকিস্তান রাজি হয়নি।


বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ গড়ার প্রত্যয় তোফায়েল ও নূরে আলমের
১৯৭২ সালের ২৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসকদের হাত থেকে যেমনভাবে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে ঠিক তেমনভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হবে। তিনি বলেন, এছাড়া বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে দেশে অরাজকতা ও অসামাজিক কার্যকলাপে যারা লিপ্ত হয়েছে তারা আইয়ুব আমলে গণতন্ত্রের নামে মৌলিক গণতন্ত্রের তল্পিবাহকদের কাজ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, সমাজতন্ত্র গাছে ধরে না, একে কায়েম করতে হলে অনেক ত্যাগের প্রয়োজন।


এদিকে যেকোনও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হবে বলে উল্লেখ করে প্রাক্তন ছাত্রলীগ সভাপতি ও যুবলীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী তার ভাষণে বলেন, এ দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি উল্লেখ করেন, জনগণের মুক্তির জন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা এতদিন মার খেয়েছে কিন্তু এখন আর মার খাবে না। মারের বদলা নেবে। তিনি বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটনের জন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা বদ্ধপরিকর।