• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

১১ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ পেলো পোশাক খাত

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২০  

করোনা মহামারির কারণে গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই— এই চার মাসে তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ স্থগিত হয়েছিল প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের। এই ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বা স্থগিত আদেশের ৮০ শতাংশ ফিরে পাচ্ছেন বাংলাদেশের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। এছাড়া করোনার মধ্যেও বহাল ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার। ফলে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও (এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই) প্রায় সাড়ে ১০ বিলিয়ন থেকে ১১ বিলিয়ন ডলারের রফতানি অর্ডার পেয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মালিকেরা। তবে স্থগিত হওয়া অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্ডারের আশা ছেড়েই দিতে হচ্ছে তাদের। একইসঙ্গে সেই তুলনায় নতুন ক্রয়াদেশ কম আসায় কিছুটা হতাশাও রয়েছে। অবশ্য যে হারে ক্রয়াদেশ আসছে, সেটিকে মন্দের ভালো বলছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা।

পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার মধ্যেও বাতিল হওয়া ও স্থগিতাদেশ হওয়া সেই পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা। পাশাপাশি নতুন করে আসছে ক্রয়াদেশও। এরইমধ্যে কিছু কারখানায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করার মতো ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে বিপর্যস্ত রফতানি আয়ের শীর্ষ এই খাতটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘সাধারণ ছুটির মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় বড় কারখানাগুলো টিকে থাকার মতো ক্রয়াদেশ ফিরে পেয়েছে।’ তবে ছোট ও মাঝারি কারখানা সেভাবে অর্ডার পাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘স্থগিত হওয়া আদেশ থেকে যেটা আসছে, তা মন্দের ভালো। তবে নতুন ক্রয়াদেশ সেই তুলনায় আসছে না বললেই চলে। এছাড়া কোনও কোনও ক্রেতা (বায়ার) স্থগিত করা অর্ডার থেকে ৮০ শতাংশ পণ্য নিতে চাইলেও অনেকে ২০ শতাংশও নিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে রফতানিতে একটা গ্যাপ থেকেই যাচ্ছে।’ আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি উল্লেখ করেন, স্থগিত হওয়া রফতানি আদেশ ফিরে আসায় গত এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় জুন ও জুলাইতে রফতানি কিছুটা ইতিবাচক দেখা গেলেও পরের মাসগুলোতে অর্থাৎ আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রফতানি কমে যাবে। কারণ, এই সময়ের জন্য রফতানি আদেশ নেই বললেই চলে। তবে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে মনে করেন তিনি।

বিজিএমইএ’র মুখপাত্র কামরুল আলমও মনে করেন, স্থগিত আদেশ ফিরে এলেও রফতানিতে সংকট থাকছেই। কারণ, একদিকে স্থগিত হওয়া অর্ডারের অন্তত ২০ শতাংশ রফতানি হবে না। অন্যদিকে নতুন অর্ডার আসছে না। তিনি উল্লেখ করেন, নভেম্বরের আগে কোনও আশাও করা যাচ্ছে না। ফলে আগামী চার মাস (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) রফতানি হয়তো ২০ শতাংশ কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই— এই চার মাসে ১২ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাতিল হয়েছে। এরমধ্যে এখন ৮০ শতাংশ বা সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ফিরে এসেছে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ ফিরে আসায় করোনা পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে তাদের সাহস জোগাচ্ছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বড় কয়েকটি ব্র্যান্ড স্থগিত ও বাতিল করা ক্রয়াদেশের পণ্য আবারও নিতে শুরু করায় পোশাক রফতানি গত জুনে বেশ খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

স্থগিত আদেশ ফেরত আসার ক্ষেত্রে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বড় ভূমিকা পালন করেছে। ঢালাও ক্রয়াদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সংগঠনটি। গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বিজিএমইএ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডকে চিঠি পাঠিয়ে ক্রয়াদেশ স্থগিত কিংবা বাতিল না করতে অনুরোধ জানায়।

এ বিষয়ে ড. রুবানা হক বলেন, ‘স্থগিত হওয়া আদেশ ফেরত আসার ক্ষেত্রে আমাদের নানামুখী উদ্যোগ ছিল। তবে ক্রেতারা অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করছে। অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে তারা শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।’ এ পরিস্থিতিকে তিনি মন্দের ভালো বলছেন।

মূলত, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে একের পর এক স্থগিত ও বাতিল হতে থাকে রফতানি আদেশ। বিজিএমইএ’র হিসাবে, তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ স্থগিত করে। তবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে রফতানি আদেশ বাড়ছে।

বাংলাদেশ থেকে একক ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পোশাক ক্রয় করে সুইডেনভিত্তিক এইচঅ্যান্ডএম। গত দেড় মাসে এই প্রতিষ্ঠানটি আরও ৪৫ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ক্রেতারা যেসব গ্রীষ্মকালীন অর্ডার বাতিল করেছিল, সেই বাতিল অর্ডার থেকেই এখন কিছু কিছু করে পণ্য নিচ্ছে। আবার নতুন করেও কিছু কিছু অর্ডার আসছে। কিন্তু শীতকালীন অর্ডার যেভাবে আসার কথা সেভাবে আসছে না। ফলে শীতকালে রফতানিতে আরেকটা বড় ধাক্কা আসবে। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই পরিস্থিতি বোঝা যাবে।’

উল্লেখ্য, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রমতে, সাধারণত, প্রতিমাসে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থাকে। গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই— এই চার মাসে অর্ডার থাকার কথা ১২ বিলিয়ন ডলার, এরমধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করা হয়। এছাড়া বিজিএমইএ’র ৩১৫ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল হয়। বাকি প্রায় ৪ বিলিয়নের বেশি অর্ডার বাতিল হয়েছে বিকেএমইএ’র মালিকদের কারখানায়। তবে এরপরও ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বহাল ছিল। এই অর্ডার বাঁচানোর লক্ষ্যেই করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়।