• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

৫০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

 

দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন গম আমদানি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এ সংক্রান্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুইস সিঙ্গাপুর ওভারসিস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এ গম সরবরাহ করবে। প্রতি টন গমের মূল্য ২৬৮ দশমিক ১৪ মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টন।

গত অর্থবছরে গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টন। আন্তর্জাতিক দরপত্রে সুইজারল্যান্ডের দুটি গম রপ্তানিকারক কোম্পানি মেসার্স এসটোন এফএফআইএসএ, মেসার্স গ্রিন এক্সপোর্ট এসএ এবং সিঙ্গাপুরের আরেকটি কোম্পানি মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই অংশগ্রহণ করে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী গত ৬ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ে দেশের খাদ্য মজুত দাঁড়িয়েছে চাল ও গম মিলে ১৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। এর মধ্যে চাল পরিমাণ ১২ লাখ ৩৯ হাজার টন অবশিষ্ট অংশ গম রয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাস জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের যে কটি দেশে সবচেয়ে দ্রুত গমের আমদানি বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

পাঁচ বছর আগেও গম আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০ দেশের তালিকার বাইরে ছিল বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ এই তালিকায় পঞ্চম দেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ, আর উৎপাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ।

গম আমদানিতে শীর্ষস্থানীয় চারটি দেশ হলো মিসর, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া ও ব্রাজিল। এই দেশগুলো থেকে সব মিলিয়ে গত অর্থবছর মোট পাঁচ কোটি সাত লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। প্রধান গম রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেন।

গম উৎপাদনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখ করার মত। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ৯ লাখ টন থেকে বেড়ে প্রায় ১২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া গমের সঙ্গে সাধারণত ভুট্টা মেশানো হয়। ভুট্টার উৎপাদনও বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ছিলো সাত লাখ ৩০ হাজার টন। গত বছর ভুট্টার উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ টন। ভুট্টার বেশির ভাগই গমের সঙ্গে মিশিয়ে পোলট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে প্রতি টন গমের মূল্য ২৬৭ দশমিক ৩০ ডলার। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টন। এ জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক হাজার ৩৪১ কোটি ছয় লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে চার লাখ ৫০ হাজার টন গম আমদানিতে এক হাজার ৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।

২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। গত এপ্রিলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল সরকারি পর্যায়ে এক লাখ টন গম আমদানির জন্য মস্কো সফর করে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৬ লাখের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভাতের চেয়ে রুটি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া অনেকে স্বাস্থ্যসচেতনতার জায়গা থেকে এক বেলা ভাত ও দুই বেলা রুটি খাচ্ছেন। ফলে দেশে আটার চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে দেশে গমের চাহিদাও বাড়ছে।

রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গম কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।