• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

৭০ হাজার মানুষের কঙ্কালে সাজানো গির্জা!

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৯  

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম কুতনা হোরা। চেক প্রজাতন্ত্রের ছোট্ট এই শহরটি এমনিতে বেশ ছিমছাম আর সাজানো-গোছানো। তবে, সেখানে পর্যটকেরা যান আরও একটি জায়গা দেখতে। সেটি হচ্ছে বিখ্যাত সেডলেক ওসারি বা কঙ্কালের গির্জা। প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার মানুষের হাড়গোড় দিয়ে বানানো হয়েছে গির্জার বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ পর্যটক কঙ্কালের গির্জা দেখতে এ শহরে যান।  

বাইরে থেকে একেবারেই সাধারণ,  দেখতে আর দশটা গির্জার মতোই। কিন্তু, ভেতরে গেলে মনে হবে, কোনো এক অস্থি সংরক্ষণাগারে চলে এসেছেন। রক্ত-মাংসের নিচে মানুষ যে একটি কঙ্কাল ছাড়া কিছু নয়, হয়তো সেটাও মনে পড়ে যাবে। 

কী আছে সেডলেক ওসারিতে?

গির্জাটি ইউরোপের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। গির্জার গম্বুজের চূড়ায় সোনালি রঙের মাথার খুলি ও হাড়ের নান্দনিক নকশা (ক্রসবোন)। আর চারপাশে অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি কবরস্থান।  

গির্জার ভেতরের দেয়ালসহ বিশালাকার ছাদ সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে অসংখ্য মানুষের হাড়গোড়। ছাদ থেকে ঝুলছে বিরাট এক ঝাড়বাতি, সেটাও তৈরি হয়েছে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় দিয়ে। ধারণা করা হয়, ঝাড়বাতিটি তৈরি করতে মানুষের শরীরের ২০৬ ধরনের হাড়ের প্রতিটিই ব্যবহার করা হয়েছে।

কঙ্কালের তৈরি ঝাড়বাতি। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া, গির্জার ভূগর্ভস্থ কক্ষে পিরামিড আকারে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য কঙ্কাল। 

একসময় এই জায়গায় কোনো গির্জা ছিল না, শুধু ছোট একটি কবরস্থানই দেখা যেতো। ১২০০ সালের দিকে এক পাদ্রী জেরুজালেম থেকে কিছু মাটি সংগ্রহ করে ওই কবরস্থানে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনার পর ওই এলাকার মানুষ পূণ্যলাভের আশায় মৃত্যুর পরে সেখানে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন। ধীরে ধীরে জায়গাটি সবচেয়ে জনপ্রিয় সমাধিক্ষেত্র হয়ে ওঠে।  

১৪০০ সালের দিকে ইউরোপে ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের অনেককেই কুতনা হোরার ওই কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। একসময় সমাধিক্ষেত্রটিতে নতুন করে কাউকে সমাহিত করার মতো আর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন অনেকটা ‘অস্থি সংরক্ষণাগার’ হিসেবে সেখানে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। এরপর গির্জার ভেতরেই সমাহিত করা হতো মৃতদের।

বিভিন্নভাবে সাজানো মাথার খুলি ও হাড়গোড়। ছবি: সংগৃহীত
১৫০০ সালের দিকে মৃত মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় গির্জায় সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয় এক খ্রিস্টান মঠকে। ১৭০০ সালের দিকে স্থপতি জ্যান সান্তিনি আইচেল গির্জাটি পুনর্নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন গির্জার ভেতরে মৃতের হাড়গোড় ও কঙ্কাল সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন। 

সম্প্রতি এই গির্জার ভেতরে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, দর্শনার্থীরা একেবারেই ছবি তুলতে পারবেন না, তা নয়। গির্জার ভেতরে ছবি তোলার জন্য তিন দিন আগে থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে। মৃতদের অসম্মান করে অশালীন ছবি তোলা ঠেকাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।