• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

পিরোজপুর সংবাদ

বাদাম চাষে কৃষকের সাফল্য

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২৩  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে বাদাম চাষ হয়েছে। এরইমধ্যে জমি থেকে বাদাম তোলা শুরু করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় এবার বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
জানা গেছে, উপজেলার মনিয়ন্দ ইউপির বেশ কয়েকটি গ্রামে নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে কৃষকরা দীর্ঘ বছর ধরে বাদম চাষ করে আসছেন। স্থানীয় বাজারে বাদামের চাহিদা ও রয়েছে বেশ ভালো। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফসল চাষের প্রতি উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এখানকার উৎপাদিত বাদাম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে বাদাম কিনে নিয়ে যান।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে সব ধরণের সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। সবচেয়ে বেশি বাদামের চাষ হয়েছে উপজেলার মনিয়ন্দ ইউপির কর্মমঠ, হারকোট, মিনারকোট, ধর্মসগর, ঘাঘুটিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে।

সরেজমিন উপজেলার মনিয়ন্দ ইউপির কর্মমঠ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে বাদামে সমারোহ হয়ে আছে। কেউ কেউ বাদাম তুলছেন, আবার অনেকে ভেজা বাদাম রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তত করছেন। কৃষাণ-কৃষাণীরা বাদাম তুলছেন ও পরিষ্কার করে তা বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

একাধিক কৃষক জানান, এখানকার বেশিরভাগ এলাকা উঁচু হওয়ায় জমিতে সবজি চাষ করা হতো। স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখন চাষিরা বাদাম চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বাদাম আবাদ করতে প্রতি ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৪ থেকে ৫ মণ বাদাম। যা স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা।

উপজেলার মনিয়ন্দ ইউপির কর্মমঠ গ্রামের কৃষক মো. সোহাগ সরকার  বলেন, আমাদের গ্রামটি অন্যান্য গ্রামের চাইতে উঁচু গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল ও দেশীয় জাতের বাদাম চাষ করছেন কৃষকরা। এ মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বাদাম আবাদ করি। হালচাষ, বীজ রোপণসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রতি বিঘা প্রায় ৭ হাজার টাকা। তবে বাদাম চাষে কোনো কীটনাশক দেওয়া হয় না। এরইমধ্যে বাদাম তোলার কাজ শেষ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে প্রায় ৫ মণ।

স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা দরে। তিনি আরো জানান, বাদাম বিক্রি নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। কুমিল্লা, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এসে বাদাম ক্রয় করে নিয়ে যায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে যাবতীয় খরচ বাদে এ মৌসুমে প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় হবে। এ মৌসুমে ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তারা খুবই খুশি।

কৃষক মো. মামুন সরকার বলেন, এক সময় বাপ দাদা বাদাম আবাদ করতেন। আমি গত ১৫ বছর ধরে আবাদ করছি। এ মৌসুমে  প্রায় ২ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয়। এরইমধ্যে বাদাম তোলার কাজ শুরু হয়েছে। গত বছর থেকে এবার তুলনামুলক ফলন ভালো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রামের মাঠের জমি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাদাম তোলার পর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সরিষা আবাদ করা হবে। তাছাড়া মৌসুম অনুযায়ী আলু, পেঁয়াজ সবজি ও ধান চাষ করা হয়। বাদাম বপন থেকে উৎপাদন পর্যন্ত তিন মাস সময় লাগে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে সময় অনেক কম লাগছে। কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

ইউপি সদস্য ও বাদাম চাষি মো. হামদু মিয়া বলেন, এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছে। বাদাম মাঠ থেকে তুলে বাড়ি আনা হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। বাদাম তোলার কাজ শেষ হলে একই জমিতে আলু, কিংবা সরিষা  চাষ করা হবে।  উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার পেয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমি প্রস্তুত করে আবাদ করা হবে। তিনি বলেন, জায়গা উঁচু হওয়ায় ধানের ফলন তেমন ভালো হয় না। তাই মৌসুম অনুযায়ী সবজিসহ বাদাম, সরিষা চাষ করে বেশ সাফল্য পাচ্ছেন। আমাদের গ্রামটি বাদামের গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বাদাম চাষে স্থানীয় কৃষকদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বাদাম চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।