• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

আজ বিশ্ব শ্রবণ দিবস

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

 


শ্রবণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশে ৫৭ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে শব্দদূষণের কারণে শহর এলাকার মানুষের শ্রবণশক্তি বেশি নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্রবণজনিত সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে জনসচেতন করতে প্রতি বছর ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবস উদযাপন করা হয়। 

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মর্সূচি গ্রহণ করেছে। এ দিকে, বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অটোলজির উদ্যোগে আজ রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলা থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। এর পর বিএসএমএমইউর মিলনায়তনে সেমিনার হবে। এতে শ্রবণজনিত সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অটোলজি মহাসচিব ও বিএসএমএমইউর অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে শ্রবণশক্তি হ্রাস একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭ লাখ ৬০ হাজার মানুষ কোনো না কোনো ধরনের শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ডিজিজ, জন্মগত, বয়স ও পরিবেশগত কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়। বেশি শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় শহর এলাকার মানুষের। শহর এলাকায় উচ্চ আওয়াজসম্পন্ন গাড়ির হর্ন ব্যবহারে শহরের মানুষের বেশি শ্রবণ সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া মাইক ব্যবহার, জনসভা, শিল্পকারখানা ও পরিবেশগত কারণেও যে শব্দ তৈরি হয়, তার দ্বারা শ্রবণজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমরা শব্দ দূষণ কমিয়ে আনার বিষয়ে মানুষকে সচেতনতা করার কাজ করছি। শহরে যেন গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন ও উচ্চ আওয়াজসম্পন্ন হর্ন ব্যবহার না করা হয় তার কাজ করছি। কারণ এটা ধীরে ধীরে মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, বিভিন্ন কারণে মানুষের শ্রবণজনিত সমস্যা হয়। শব্দ দূষণ, কানপাকা, কানের পর্দা ফুটা, দুর্ঘটনা ও বার্ধক্যজনিত এর মধ্যে অন্যতম। তবে বেশি শ্রবণ সমস্যা হয় শব্দ দূষণের কারণে। শব্দের স্থিতি ক্ষণস্থায়ী হলেও শব্দদূষণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শ্রবণজনিত সমস্যা প্রতিরোধে শব্দদূষণ কমাতে হবে। এর পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিত করা গেলে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তাই শ্রবণজনিত যে কোনো সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, শব্দ দূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি কমছে। শব্দ দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি। শব্দদূষণ রোধে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি। শব্দদূষণ সম্পর্কে মানুষ সচেতন হলেও তা কাজে আসছে না। বিশেষ করে শহর এলাকায় মোটরসাইকেল ও গাড়ি বাড়ায় হর্ন বেশি ব্যবহার হয়। এতে শব্দদূষণও বাড়ছে।

সংস্থাটির ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা ও হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এ ছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে আসে, বধির হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়, মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনঃসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ ও মস্তিষ্কের রোগও হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (দিবাকালীন) সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত (রাত্রিকালীন) ৪৫ ডেসিবেল।

একইভাবে, নীরব এলাকার জন্য এ শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার শব্দসীমা ৭০ ও ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর থেকে বেশি মাত্রায় শব্দ সৃষ্টি করা দ-নীয় অপরাধ। কিন্তু বাস্তবে এ শব্দসীমার চেয়ে শব্দসীমা বিরাজ করছে। নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ১০৪ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৮ থেকে ১০৪ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯১ থেকে ১০৮ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৬ থেকে ৯৩ ডেসিবেল, যা মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি।

প্রতিবেদনে শব্দদূষণ বন্ধে বিধিমালা বাস্তবায়নে গাড়িচালক ও গাড়ির মালিকগণকে শব্দদূষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিতকরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত বিধান এবং শব্দদূষণ বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।