সঠিক পথে রাজনীতিকে পরিচালিত করতে সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে: রাষ্ট্রপতি

রাজনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সকল রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এক্ষেত্রে শুধু সদিচ্ছা ব্যক্ত করাই যথেষ্ট নয়, ঘরে বসে না থেকে মাঠে নেমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনের চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের চতুর্থ দিনে খেলাফত মজলিস এবং তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি এ কথা বলেন।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে মো. আবদুল হামিদ সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করেন বলে সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

প্রেস সচিব বলেন, একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সংলাপের চতুর্থ দিন (সোমবার) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ) এবং খেলাফত মজলিসের সাথে আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এ আলোচনায় অংশ নেন।

খেলাফত মজলিস নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব প্রস্তাবনা দেন আবদুল হামিদের কাছে।

এর আগে বিকেল চারটায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল।

তরিকত ফেডারেশন রাষ্ট্রপতির কাছে চার দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো হলো- বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা, অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন যেখানে গণমাধ্যমের একজন প্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইসিতে যাতে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী বা তাদের পরিবারবর্গের কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হয়।

এসময় রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনই সংলাপের আলোচনার মূল লক্ষ্য।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে। তিনি দেশের ইসি গঠনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন।

২০ ডিসেম্বর সংলাপের প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপে বসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ পর্যন্ত মোট ছয়টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে, ২৯ ডিসেম্বর বুধবার বিকেল চারটায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ সাথে এবং একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে, ২ জানুয়ারি বৈঠক হবে গণফোরামের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর সাথে সন্ধ্যা সাতটায়, আগামী ৩ জানুয়ারি সংলাপ হবে গণতন্ত্রী পার্টির সাথে সন্ধ্যা ৭ টায় এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সন্ধ্যা সাতটায়।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। সংলাপের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।

বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।