• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২৩  

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্মার্ট শিল্পনগরীতে রূপান্তর করা সহজ হবে। এ কারণেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃপক্ষ মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে। এর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে শুধু চট্টগ্রামই নয়, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়কও যথাযথ মানে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অনুদানে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৪৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ করলে অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সমুদ্রবন্দর, রেল ও সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেরিন ড্রাইভ এবং আবাসিক এলাকার মতো সামাজিক অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখানে পর্যটন, পার্ক, হাসপাতাল, স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণের মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাসহ যানজট কমবে। টেকসই নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে।

জানা গেছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফ চর ও পীরেরচর এলাকায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম থেকে ৬০ কিলোমিটার, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ কিমি, ঢাকা থেকে ২০০ কিমি এবং সিলেট থেকে ৩৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বেপজা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন ২০১৮’ এর মঞ্চ থেকে ভিডিওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১ হাজার ১৫০ একর জমিতে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এর ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৪টি বিদেশি এবং স্থানীয় কোম্পানি তাদের কারখানা স্থাপনের জন্য বেপজার সঙ্গে ইজারা চুক্তি করেছে। নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত চীনের মালিকানাধীন কেপিএসটি সু (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড, জাপানের নিপ্পন স্টিল, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, পেইন্টস, সামুদা ফুড ও ম্যারিকো কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে।

বেজা সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় টুএ ও টুবির (বিজিএমইএ গার্মেন্টস পল্লী) ভেতরে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা খরচে ২৩ কিলোমিটার ২ লেনের রাস্তা ও ২৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর মাধ্যমে টুএ ও টুবিতে (বিজিএমইএ গার্মেন্টস পল্লী) বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এখনই জমি বুঝে নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানায় বেজা।

বেজার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বেজা ও বিজিএমইএসহ সব বিনিয়োগকারী একসঙ্গে কাজ করলে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথ অনেক সহজ হবে। সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে কাজ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের উন্নয়নে এগিয়ে আনতে হবে। বেজা জানিয়েছে, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩৩ হাজার একর নিয়ে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর' স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। যেগুলোর উৎপাদন কাজ গত ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

আরও ২১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে যা পর্যায়ক্রমে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদনে যাবে। এই শিল্পনগরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ হবে বলেও জানায় বেজা।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ২৩১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সড়ক বাঁধে মাটির কাজ করা হবে। ১২৯ দশমিক ৫৬২ কিলোমিটার বিদ্যমান পেভমেন্ট প্রশস্ত করা হবে। তা মজবুত করা হবে। প্রকল্প এলাকায় আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। ৪৯টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ব্রিক মেশিনারি টো-ওয়াল ও আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপি’তে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় উচ্চ অগ্রাধিকার বিশিষ্ট প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে।

সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এবং ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১৪৯.৭৩০ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি যথাযথ মানে উন্নীতকরণের মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জুন ২০২২ এ জারিকৃত ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা’ এর ৩.২.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক অনুমোদনযোগ্য। এমন অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উন্নয়ন ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবদুল কাদের খান জানিয়েছেন, ‘নগরায়নের সমস্যা মোকাবিলায় একটি স্মার্ট শিল্প শহরই হতে পারে নিখুঁত চিকিৎসা। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে চালিত করে এবং এর বিকাশকে উৎসাহিত করে। এটি পর্যাপ্ত শহুরে অবকাঠামো প্রদানের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তাকেও নির্দেশ করে। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত দিকগুলোর ক্ষেত্রে আইসিটি এবং অন্যান্য উপায়গুলো ব্যবহার করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নগর ব্যবস্থাপনা এবং পরিষেবাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি করে। যা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি যথাযথ মানে উন্নীতকরণের মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্মার্ট শিল্পনগরীতে রূপান্তর করতে বেজা মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে। যাতে সমুদ্রবন্দর, রেল ও সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেরিন ড্রাইভ এবং আবাসিক এলাকার মতো সামাজিক অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে পর্যটন, পার্ক, হাসপাতাল, স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপন করা হবে।’