• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

পদ্মাসেতুর প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৃশ্যমান

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  


একের পর এক স্প্যান বসিয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে চলেছে পদ্মাসেতুর। পদ্মার মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর স্থায়ী ১৬ তম স্প্যান ‘৩-ডি’ বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর ২৪০০ মিটার (২ দশমিক ৪ কিলোমিটার)। 


ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২৬টি স্প্যান বসলেই। ১৫ তম স্প্যান বসানোর ২৮ দিনের মাথায় ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ‘৩-সি’ স্প্যানের সঙ্গে বসেছে এই স্প্যানটি। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর সফলভাবে অস্থায়ী স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ২৪০০ মিটার। সেতুর ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর পিলারের ৩-এ, ৩-বি, ৩-সি স্প্যানের সঙ্গে বসলো ৩-ডি স্প্যানটিও। 

এর আগে সকাল ৯টা ৪৬ মিনিটের দিকে দিকে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের আর ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে বহন করে রওয়ানা করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন। সাড়ে ১০টার দিকে নির্ধারিত পিলারের সামনে এসে কার্যক্রম শুরু হয় স্প্যান বসানোর। 

এর আগে মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ‘৩-ডি’ স্প্যানটিকে বহন করে নিয়ে আসে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন। 

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া আর ভাসমান ক্রেনটির অ্যাংকরিংসহ সবকিছু অনুকূলে থাকায় কোনোভাবে জটিলতা ছাড়াই সফলভাবে স্প্যানটি বসানো হয় পিলারের ওপর। দু’পিলারের মধ্যবর্তী সুবিধাজনক স্থানে এনে ভাসমান ক্রেনটিকে নোঙর করা হয়।

এরপর পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দু’পিলারের বেয়ারিং এর ওপর। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় থাকায় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে হওয়ায় প্রকৌশলীরা মঙ্গলবাইই স্প্যান বসাতে সক্ষম হন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওয়েট টেস্ট, ট্রায়াল লোড টেস্ট, বেজ প্লেট, পাইল পজিশন, মেজারমেন্টসহ আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়।  তিন ঘণ্টার চেষ্টায় স্প্যান বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ্মাসেতুর সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী  বলেন, ১টা ১০ মিনিটে ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় ‘৩-ডি’ স্প্যানটি বসানো হয়। ৪২টি পিলারের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩২টি পিলারের। চলতি মাসেই আরও দুইটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে। সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের স্প্যান ‘৪-ডি’নদীর তীরে প্ল্যাটফর্মে রাখা আছে। ২১ ও ২২ নম্বর পিলারের স্প্যান ‘৪-সি’ পিলারের ওপর বসাবোর জন্য প্রস্তুত আছে। এছাড়া মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে ৬-এ,৬-বি,৬-সি পেইন্টিং শেষে পিলারের ওপর নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়ায় ৩১টি স্প্যান আসে, এর মধ্যে ১৬টি স্প্যান বসানো হয়েছে। 

পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।