• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২০  

 

 

চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূতহয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারিউদিসাইসলাম১৯৭১ সালের ২ মার্চবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি একবার আগুন জ্বলে ওঠে, তাহলে সে আগুনে চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে।’ একাত্তরের মার্চের প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদে মুখোর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এদিন বঙ্গবন্ধু বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর ঠিক একবছর পর ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নে সফররত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে দুই দেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় এবং যৌথ ঘোষণা প্রস্তুত করে। ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ দেশে কোনও পত্রিকা বের না হওয়ার কারণে ৪ মার্চ পত্রিকায় এইসব খবর প্রকাশিত হয়।

১৯৭২ সালের ৪ মার্চের পত্রিকা

বঙ্গবন্ধুর ডাক

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২ মার্চ দেশবাসীকে ডাক দিলেন এবং সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ দিন এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ার করে দেন— ‘বাংলাদেশে যদি একবার আগুন জ্বলে ওঠে, তাহলে সেই আগুনে চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে।’এ ধরনের নির্যাতনমূলক অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য জান্তার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখাকে তিনি বাঙালি জাতির প্রতি অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করেন।

১৯৭২ সালের ৪ মার্চের পত্রিকা

শোভাযাত্রায় ভরে ওঠে রাজপথ

পাকিস্তান সরকারের হঠকারিতায় বিক্ষুব্ধ ঢাকা নগরীতে ১৯৭১ সালের১ মার্চ পালিত হয় সর্বাত্মক হরতাল। বাঙালিদের প্রস্তুতি ছিল ঘরে ঘরে। শত মিছিলে মুখরিত হয়েছিল সারা শহর। প্রত্যেকের মুখে মুখে— ‘আর ষড়ষন্ত্র নয়, বাঙালি রুখে দাঁড়াও, চাই স্বাধীনতা, চাই মুক্তি’, স্লোগানে ভরে ওঠে রাজপথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে-আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ছাত্রসভায় বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হয়।

আমরা একটা পতাকা পেলাম

একাত্তরের সেই দিনের সেই সভাতে  ছাত্রসমাজ  সর্বপ্রথম উড়িয়ে ছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা । সেই যে পতাকা উড়েছিল, তা আর নামেনি। তাইতো আজও সগর্বে উড্ডীন রয়েছে বাঙালির অহঙ্কার লাল-সবুজের সেই পতাকা বাংলার মানচিত্রে। এই পতাকার জন্য রক্ত দিয়েছে বাংলার মানুষ, রঞ্জিত রক্তে মিলেছে ভূখণ্ড— তবু সেই পতাকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের মানুষ।

১৯৭২ সালের ৪ মার্চের পত্রিকা

রক্তাক্ত রাজপথ, জনতা কারফিউ মানেনি

১৯৭১ সালের এই দিনে(২ মার্চ) ইয়াহিয়া চক্র বাধা দিয়েছে মিছিলে-মিটিংয়ে। তবু শতবাধা উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে তবু বীর বাঙালি এগিয়েছিল।  প্রাণকে তুচ্ছ করে রক্ত দিয়েছে বাঙালি, রক্ত ঝরেছে রাজপথে। সেদিন থেকেই শুরুসর্বাত্মক আন্দোলনের। মিছিলে মিছিলে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকা নগরী। গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ৯ জন হতাহত হওয়ার পর কানফিউ জারিকরে সামরিক জান্তা। কিন্তু জনতা কারফিউ মানেনি। ব্যারিকেড ভেঙেছে সর্বত্র। সান্ধ্য আইন জারি করে বেপরোয়া গুলি চালায় সামরিক জান্তা। তাতে আবারও প্রাণ ঝরলো অনেকের। দৈনিক বাংলা (তখনকার দৈনিক পাকিস্তান)  অফিসের কিছু দূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় এক কিশোর। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আজিম মোর্শেদও এদিন শহীদ হন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সফর সফল

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফর সফল হয়েছে বলেই পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। শীর্ষ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার সাফল্য ভারতীয় উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলতর করবে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন ক্রেমলিনের এক অনুষ্ঠানে যুক্ত ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। লেনিন গ্রাদের পথে মস্কো ত্যাগের প্রাক্কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ বলেছেন—বঙ্গবন্ধুর সোভিয়েত সফরের ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট । আলোচনাসফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে। সবপ্রধান প্রধান বিষয়ে দুইবন্ধু দেশের নেতাদের চিন্তার ঐক্য শান্তি ও ন্যায়ের স্বপক্ষেতাদের বলিষ্ঠ প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও সম্ভাবনাময় ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তুলেছে।

গণবিপ্লব দিবসের ছবি, ১৯৭২ সালের ৪ মার্চের পত্রিকারক্তাক্ত রাজপথ, জনতা কারফিউ মানেনিশর্তহীন সাহায্য

তুষারপাতের রেকর্ড হৃদয়ের উষ্ণতাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। সোভিয়েত দেশে বাংলাদেশ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো অন্যান্য বন্ধুদের কাছে বাংলাদেশ সাহায্য প্রত্যাশা করে। তবে সেই সাহায্য কোনও শর্ত দিয়ে নয়।’

বঙ্গবন্ধু রাশিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে এই উক্তি করেন। দুই দেশেরমধ্যকার যৌথ ঘোষণাটি ৫মার্চ ঢাকা ও মস্কোতে একসঙ্গে প্রকাশিত হবে বলেও জানানো হয়।

গণবিপ্লবের ছবি ৪ তারিখ প্রকাশিত

এশিয়ায় শান্তি কামনা

১৯৭২ সালের মার্চের এই রাশিয়া সফর অনেকগুলো দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুই দেশের প্রধান তাদের বক্তৃতায় তাদের দুই দেশের সম্পর্কের মূলনীতি ঘোষণা করেছিলেন। পরস্পরের সমমর্যাদায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান এবং কারও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এই সম্পর্কের ভিত্তি। দুটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি শুধু উপমহাদেশের সুরক্ষিত নয়, বিশ্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। সদ্য স্বাধীনতা লাভ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব দেশ গড়ার কারণেই এশিয়ায় শান্তির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। নিজের দেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে থেকেও তিনি ভিয়েতনামের ট্র্যাজেডি ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি উদাসীন থাকতে পারেননি। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছেন ভিয়েতনাম থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার না হলে শুধু এশিয়া নয়, বিশ্ব শান্তি আসবে না।

গণবিপ্লব দিবসের ছবি চার তারিখের পত্রিকায

ছাত্রলীগ নতুন সরকারের সমালোচনাও করতে চায়

১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের বিপ্লব দিবসে নেতারা বলেছিলেন, শুধু সরকারকে সমর্থন নয় সমালোচনা করবে ছাত্রলীগ। শুধু সরকারকে সহযোগিতা সমর্থন দিয়ে যাবে না। প্রয়োজন বোধে যেকোনও গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নুরে-আলম সিদ্দিকী এইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন। নেতা আ স ম আবদুর রব তরুন বাঙালি সংস্কৃতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের কোনও উর্দু বা হিন্দি ছবি চলতে পারবে না। বাজারে কুৎসিত তথ্য সরবরাহ বন্ধ করার জন্য তিনি প্রকাশক ও বিক্রেতা দের সতর্ক করে দেন। তিনি ঘোষণা করেন, যদি এই সপ্তাহের মধ্যে এগুলো করা না হয় তবে ছাত্রলীগ কর্মীরা ৮ মার্চ থেকে পিকেটিং শুরু করবে।