• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

আ. লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী জিয়ার নির্যাতনের শিকার

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২২  

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী জিয়াউর রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেকেই তাঁর নির্যাতনের শিকার হন। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জিয়াউর রহমান ডিভিশন না দিয়ে কারাগারে ফেলে রাখেন।

গতকাল রবিবার সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানের ওপর আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে শোক প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা শেষে তা সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়। পরে এক মিনিট নীরবতা ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মতো খালেদা জিয়াও একইভাবে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিলেন। রওশন এরশাদ, তিনি তো মাস্টার ডিগ্রি পাস। পেনাল কোডে আছে, মাস্টার ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাঁকে ফেলে রাখা হয়েছিল। আমরা তো তা-ও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে নির্বাহী আদেশে তাঁর শাস্তিপ্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা করা হয়েছে তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ বলে। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেননি। বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন জামাল উদ্দিন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে, ঘড়ি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। এভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধ হয় সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে এখন। ’

প্রয়াত নেতাদের আদর্শ মাথায় রেখে দল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্য নিবেদিত নেতাকর্মী এই সংগঠনের হাল ধরেছেন বলেই চরম দুঃসময়ে এই সংগঠন দিক হারায়নি, নীতি-আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে। সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন, তা ভোলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পের নেতৃত্বে যেমন ছিলেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামের পাশাপাশি আমাদের জাতীয় জীবনেও অবদান রয়েছে তাঁর। ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদা চৌধুরীও এর শিকার হন। জিয়াউর রহমান তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল; এ অবস্থায় জিয়াউর রহমান তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠান। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করেন। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাঁদের ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো জেলে ফেলে রাখে। এ দেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাঁকে ফুফু বলে ডাকতাম। ’

সংসদ নেতা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আইন করেছিলেন পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারো নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী অটল ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারো কারো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। তিনি কিন্তু এ ব্যাপরে অটল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, তাই এই আইন করেছিলেন। আমি দেশে আসার পর তাঁকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে সে অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। পঁচাত্তরের পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তিচুক্তি করি। এক হাজার ৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাঁকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সে লেখাপড়া করেন। তিনি একজন স্বাধীনতাসংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে হারাল। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বয়স হয়ে গেছে, যেতেই হবে। আমিও একদিন চলে যাব। তবে যে যেটা করেছে সেটা স্মরণ করতেই হবে। ’