• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বিশেষ বিদ্যা-সনদ ছাড়াই তিন বছর ধরে ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’ তিনি

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২০  

চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গত তিন বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। রোগীও আসেন তার চেম্বারে। কিন্তু নিজের না আছে বিশেষ কোনো ডাক্তারি বিদ্যা কিংবা সনদ। না আছে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অনুমোদন। তবুও তিন বছর ধরে ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ডেমরা থানাধীন এসএইচএস হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সুমন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে ধরা পড়েছে তার কুকীর্তি। গতকাল রোববার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনজনের জেল-জরিমানা প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। গ্রেফতাররা হলেন-ভুয়া চিকিৎসক শওকত হোসেন সুমন, ল্যাব টেকনোলজিস্ট অসীম মণ্ডল ও ফার্মেসি ইনচার্জ কাকন মিয়া।

র‌্যাব-৩ জানায়, ডেমরা থানাধীন এসএইচএস হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সুমন নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গত তিন বছর ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সংবাদ পেয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে জানা যায়, হাসপাতালটি অনুমোদনহীন ভ্যাকসিন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, সরকারি ওষুধ, নিষিদ্ধ যৌন উত্তেষক ওষুধ বিক্রয়ের জন্য অপরিষ্কার, অস্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীবিহীন রুমকে আইসিইউ রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

পরে এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে এসএইচএস হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকের চেয়ারম্যান ভুয়া চিকিৎসক শওকত হোসেন সুমনকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পাশাপাশি ল্যাব টেকনোলজিস্ট অসীম মণ্ডলকে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ফার্মেসি ইনচার্জ মো. কাকনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। পরে এসএইচএস হেলথ কেয়ার হসপিটালকে সিলগালা করে দেয়া হয়।

অভিযান সম্পর্কে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, অভিযানকালে ভুয়া ডাক্তার সুমনকে রোগীর ব্যবস্থাপত্র প্রদানকালে হাতেনাতে আটক করা হয়। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসাবাদে ডাক্তারি সপক্ষে কোনো সার্টিফিকেট বা বৈধ কাগজ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হন। পরে হাসপাতালের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে যে সকল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চিকিৎসা প্রদান করেন বলে দাবি করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউই সেখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন না।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পরীক্ষা না করেই বিভিন্ন ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করে রিপোর্ট প্রদান, মেয়াদোত্তীর্ণ অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড সিলিন্ডারকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারে পরিবর্তন করে মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।