• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

চিকিৎসক-প্রকৌশলী সেজে প্রতারণা, টার্গেট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২২  

কখনো বিদেশি এনজিও কর্মকর্তা, কখনো বিশাল ডিগ্রিধারী চিকিৎসক-প্রকৌশলী, আবার কখনো তারা ঊর্ধ্বতন ও প্রভাবশালী আমলা বা সরকারি কর্মকর্তা। এসব পরিচয় নিয়ে মানুষকে সহায়তা কিংবা যৌথ ব্যবসায় বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারিতদের অভিযোগে গ্রেফতারও হন৷

জামিনে বেড়িয়ে আবারও লিপ্ত হন প্রতারণায়৷ দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে পেশা হিসেবে প্রতারণা করে আসছে এমন চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বের হয়ে এসেছে।

চলতি মাসেই এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিব। অধিক লাভের আশায় তাদের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে চক্রটির নানা টালবাহানায় সাবেক এই সচিব প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন৷

তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি ও কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোড এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. হায়দার আলী (৬৪), মো. রেজাউল করিম (৩৭), মো. নাসির উদ্দিন (৪৯) এবং মো. আব্দুল কাদের (৫৬)।

এসময় তাদের কাছে থাকা প্রতারণার ২০ লাখ তিন হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রত্যেকবার নাটকীয় উপায়ে এই চক্রটি প্রতারণা করে থাকে। গ্রেফতারের আগে চক্রের এক সদস্য অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের একজন ফোন করে নিজেকে ‘বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্ল্যান্ট’ প্রকল্পের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন।

কথাবার্তার এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রকল্পে পরামর্শক পদে চাকরির প্রস্তাব দেন। চাকরির বিষয়ে আলোচনা করতে তাকে ডাকা হয় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের চক্রটির অফিসে। সেখানে ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া হায়দার আলীসহ অন্যান্যদের পরিচয় হয়। এসময় প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শুরু করেন।

গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেন, চক্রের একজন সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি অন্যান্য সদস্যদের জানান, তার একজন ভারতীয় বস ১৬ কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা কিনবে। এসব পণ্য ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ৩০ শতাংশ লাভ হবে।

এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে কিন্তু সেটা ৭৫ লাখ টাকার জন্য করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় চক্রের সদস্যরা সাবেক এই সচিবকে ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। প্রথমে রাজি না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনে তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এরপর ৫ লাখ টাকা দেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানান নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে এবং নমুনা পছন্দ করেছে।

কয়েকদিন পর ভুক্তভোগী প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান কথিত ভারতীয় বস তাদের শর্তের লাভের অংশ হিসাবে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। এবার চক্রটি ভুক্তভোগীকে জানায় তারা ইমপোর্টারকে পুরো টাকা অর্থাৎ ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দেবেন না। এবার পণ্যগুলো কেনার জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। একপর্যায়ে ভিকটিম তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে অফিস সাজিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তাদের মূল টার্গেট অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ লোক। এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি করে মামলা আছে।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়েছে বলেও জানান ডিবি প্রধান।