• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

সাপ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারালেন সর্প বিশেষজ্ঞ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০১৯  

 

সাপ ধরতে গিয়ে সাপের ছোবলে প্রাণ হারালেন খোদ সর্প বিশেষজ্ঞ নিজেই। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাকপুরের নাপিত পাড়ায়। মৃত ওই সর্প বিশেষজ্ঞের নাম অনুপ ঘোষ (৬৩)। শনিবার রাতে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল থেকে বারাকপুর বি এন বসু হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার নৈহাটির হাজিনগরের একটি গৃহস্থ বাড়িতে বন বিভাগের কর্মীদের ডাকে অন্যান্য দিনের মতোই সাপ ধরতে গিয়েছিলেন বারাকপুরের সর্প বিশেষজ্ঞ অনুপ ঘোষ। নৈহাটির হাজী নগরে ওই গৃহস্থের বাড়িতে তিনটি চন্দ্রবোরা সাপ লুকিয়ে ছিল। জানা গেছে, ওই বাড়ির সদস্যরা তাদের বাড়ি থেকে ওই সাপগুলো উদ্ধার করতে বারাকপুরের বন বিভাগের কর্মীদের খবর দেন। চন্দ্রবোড়া সাপ ওই বাড়িতে রয়েছে শুনে বন দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে সাপ উদ্ধারে যান বিট্রানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার প্রাক্তন কর্মী তথা সর্প বিশেষজ্ঞ অনুপ ঘোষ।

নৈহাটি হাজিনগরের সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি চন্দ্রবোড়া সাপ রয়েছে ওই গৃহস্থের টালির চালে। এক এক করে দুটি সাপকে ধরে অনুপ বাবু ব্যাগে ভরে ফেলেন। কিন্তু তৃতীয় চন্দ্রবোড়া সাপটিকে ধরে করে ব্যাগে ভরার সময় সেই সাপটি অনুপ বাবুর হাতে কামড় দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনুপ ঘোষ। এরপরই অনুপ বাবুকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দুই দিন সেখানে ভর্তি থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে বেড না থাকায় তাকে বারাকপুরের বি এন বসু হাসপাতালে নেওয়ার পর পথেই মৃত্যু হয় সর্প বিশেষজ্ঞ অনুপ ঘোষের।

অনুপ বাবু দীর্ঘদিন ধরেই বন দপ্তরকে সাপ উদ্ধার করে দেওয়ার কাজ করতেন। শেষ পর্যন্ত তার সেই নেশাই আজ তার জীবন কেড়ে নিল। এদিকে অনুপ ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার বারাকপুরের নাপিত পাড়ায়। তার বাড়িতে এবং এলাকাতেও তিনি পশুপাখি প্রেমী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না এলাকার প্রতিবেশীরা।

তার স্ত্রী শিখা ঘোষ বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের কর্মীদের ডাকে তাদের সাহায্য করতে সাপ ও অন্যান্য পশু পাখি ধরে দিত’। ‘গত বৃহস্পতিবারও একইভাবে নৈহাটিতে সাপ ধরতে গিয়েছিল’। সাপ ধরা ওর নেশা ছিল বলে জানান অনুপ বাবুর স্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ‘এতবছর ধরে অনুপ বাবু নানা বিষাক্ত প্রজাতির সাপ ধরেছে’। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি। ‘সেদিন অসতর্কতার কারণে হয়ত ওকে সাপ কামড়ে দিয়েছিল’। ‘আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না’। ‘তবে সে বন বিভাগের কর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে সহায়তা করে এসেছে’। দিনরাত যখনই ওকে বন বিভাগের কর্মীরা ডেকেছে তখনই সে ছুটে গেছে’।

সেদিনও ওদের ফোন পেয়েই তিনি সাপ ধরতে গিয়েছিলেন। ‘আমার সংসারটা কি করে চলবে এখন সেটাই বড় সমস্যা’। ‘উপযুক্ত এক ছেলে আমার বেকার’। ওকে যদি সরকার একটা ব্যবস্থা করে দেয় বা আমাদের পাশে যদি সরকার থাকে আমার সংসারটা বেঁচে যাবে।' সর্প বিশেষজ্ঞ অনুপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হয়ে বিভিন্ন স্কুলে সাপ নিয়ে সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করতেন। তার মৃত্যু খবর শুনে তার বাড়িতে ছুটে আসছেন তার পাড়া প্রতিবেশী থেকে শুরু করে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় উপকার পাওয়া মানুষজন। সবাই তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।