• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপির রূপরেখা ঘোষণা প্রক্রিয়াটি ‘রাজনৈতিক অভিলাষ’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২২  

২০১৭ সালের ১০ মে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই ভিশনকে কেন্দ্র করে আবারও নতুন ‘রূপরেখা’ প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ  সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) গুলশানের হোটেল দ্য ওয়েস্টিনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শর্তবন্দি হয়ে গৃহে অন্তরীণ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘নির্বাসনে’, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে রেখে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে কতটা কার্যকর হবে— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলের মূল তিন নেতাকে দৃশ্যপটে অনুপস্থিত রেখে তাদের মুক্তি ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য না দিয়ে ভবিষ্যতের রূপরেখা ঘোষণার প্রক্রিয়াটি ‘রাজনৈতিক অভিলাষ’। এমনকি পরিশেষে তা রাজনীতিতে ‘রূপকথা’ হিসেবে থাকতে পারে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো খুবই দুর্ভাগ্যজনক। খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুলকে আটক করা হয়েছে। তবে নেতৃত্বের অনুপস্থিতি নেই বিএনপিতে। পার্টি তো থেমে থাকতে পারে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘যখন ছয় দফা ঘোষণা করা হয়, তখনও সবাইকে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান সরকার। মাত্র দুয়েক জন ছাড়া সবাইকেই। তারপর সেই ছয় দফার ভিত্তিতে আন্দোলন বেগবান হয়ে ৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করেছিল। ফলে, এসব কথা যারা বলে (রূপকথা) তারা হয়তো মশকরা করতেই বলছে। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে দল চালাচ্ছেন এবং বিদেশে নির্বাসনে থেকেও তারেক রহমান সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করেছেন।’

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ উদ্ধৃত হওয়ার অনিচ্ছা প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে কারাগারে রেখে রূপরেখা ঘোষণায় তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এটা (রূপরেখা) দেওয়ার বিষয়ে তাড়াহুড়ো আগে থেকেই ছিল। স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে— সর্বসম্মতিক্রমে, রূপরেখাটি প্রকাশ করার।’

দলের স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব গত ৮ ডিসেম্বর দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। আগের দিন ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা পেছানো হয়েছে।

প্রভাবশালী একাধিক নেতা রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন, রূপরেখা উপস্থাপনের বিষয়টি আরও পেছানোর সুযোগ ছিল।

বিএনপির শুভানুধ্যায়ী একজন বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘আগামী ২১ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলের শুনানি হওয়ার কথা।’

বিএনপির প্রভাশালী একনেতা জানান, মির্জা ফখরুলের গ্রেফতার, রূপরেখা তাড়াহুড়ো করে ঘোষণার দিনক্ষণ নির্ধারণ করার পেছনে সিনিয়র নেতাদের কারও কারও প্রত্যক্ষ অবদান আছে।

শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে রূপরেখা কেমন প্রভাব ফেলবে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘প্রভাবের বিষয়টি তো নীতিনির্ধারকরা বলবেন, এটা তাদের বিষয়। তবে নেতিবাচক কিছুতে তো সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বন্ধ থাকে না। একটি রাজনৈতিক দলের অনেক দায়-দায়িত্ব থাকে। হয়তো তারা থাকলে বিষয়টি আরও স্মুথলি (সহজভাবে) করা যেতো। এখন আরও চ্যালেঞ্জিং।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, ‘এটা কী ধরনের কথা! সেক্রেটারি জেনারেল নেই, ড. মোশাররফ হোসেন আছেন। প্রত্যেকটা দলের কাঠামো আছে।’

নওশাদ জমির আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল অনেকদিন ধরে দলের মহাসচিব। দলে তার অবস্থান শক্ত আছে। এটা বুঝেই সরকার তাকে গ্রেফতার করেছে। দেশে আইনের শাসনের এত দুরবস্থা যে— তাকে যে অপরাধের নামে জেলে নেওয়া হয়েছে, অথচ ফৌজদারি কার্যবিধিতে তিনি জামিনের হকদার।’

ঢাবি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘যেকোনও বড় দলে’ বিশেষ করে বিএনপিতে একটা চেইন অব কমান্ড আছে। কোনও একটা জায়গায় ব্রেক করলে যিনি নেক্সট থাকেন, তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখন যে রূপরেখা দেওয়া হবে সেটিও সাকসেসফুল হবে। তবে যে ‘রূপকথা’র কথা বলা হচ্ছে— আমি মনে করি, তা হবে না।’

বিএনপির রূপরেখার প্রস্তুতের কাজে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করার বিষয়ে বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যাপক চাপ ছিল।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হকও এর ইঙ্গিত দেন। রবিবার বিকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলন কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্য না। রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছে। আমরা মনে করি, বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন দরকার। রূপরেখাটি প্রকাশ্যে আনতে চাপ ছিল, বড় ধরনের চাপ ছিল বিএনপির ওপর।’

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, বিএনপি কী রূপরেখা দেয়, দেখছি। এটা সব বিরোধী দলের রূপরেখা। দেশের সংস্কার প্রয়োজন।’

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, সোমবার বিকাল ৩টায় দ্যা ওয়েস্টিন হোটেলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনা'র পরিকল্পনা এই রূপরেখায় ফুটে উঠবে।