• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

কেমন হবে জান্নাত?

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০১৯  


 

জান্নাত আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘নিশ্চয় তাকওয়াবানরা বাস করবে উদ্যান ও প্রস্রবণসমূহে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ করো। আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। সেথায় তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।’ [সুরা হিজর, ৪৫-৪৮]

তিনি আরো বলেন: ‘হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিল এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলে। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিনীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ করো। স্বর্ণের থালা ও পান পাত্র নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবে। সেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটাই জান্নাত, তোমরা তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ যার অধিকারী হয়েছ। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে।’ [সুরা যুখরুফ, ৬৮-৭৩]

তিনি অন্য জায়গায় বলেন: ‘নিশ্চয় তাকওয়াবানরা থাকবে নিরাপদ স্থানে-বাগানসমূহে ও ঝরনাধারায়। ওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমি বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়াতনয়না হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। (ইহকালে) প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। (এ প্রতিদান) তোমরা প্রতিপালকের অনুগ্রহস্বরূপ। এটাই তো মহাসাফল্য।’ [সুরা দুখান, ৫১-৫৭]

আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন: ‘পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দে। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দের সজীবতা দেখতে পাবে। তাদেরকে মোহর আঁটা বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে। এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগিতারা প্রতিযোগিতা করা উচিত। এর মিশ্রণ হবে তাসনিমের (পানির)। এটি একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে।’ [সুরা মুতাফফিফিন, ২২-২৮]

এবার কয়েকটি হাদিস দেখি-

১) জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবে; কিন্তু পেশাব-পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝারবে না, পেশাবও করবে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম (হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে)। তাদের মধ্যে তাসবিহ ও তাকবির পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবে, যেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।’ [সহিহ মুসলিম : ২৮৩৫, আবু দাউদ : ৪৭৪১]

২) আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ- ‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময়স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে [সুরা সাজদাহ, ১৭]।’ [সহিহ বুখারি : ৩২৪৪, ৪৭৭৯, ৪৭৮০]

৩) আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। তারপর তাদের পরের দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা জান্নাতে পেশাব করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়াতলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে, (যাদের উচ্চতা হবে) ষাট হাত পর্যন্ত।’ [সহিহ বুখারি : ৩২৪৫, ৩২৪৬, ৩২৫৪, ৩৩২৭]

৪) বুখারি-মুসলিমের আরেক বর্ণনায় আছে যে, ‘(জান্নাতে) তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের, তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংস ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবিহ পাঠে রত থাকবে।’

৫) মুগিরা ইবনু শুবা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মুসা (আলাইহিস সালাম) স্বীয় প্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জান্নাতিদের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতি কে হবে? আল্লাহ তায়ালা উত্তর দিলেন, সে হবে এমন এক লোক, যে সমস্ত জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর (সর্বশেষ) আসবে। তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! আমি কিভাবে (কোথায়) প্রবেশ করব? অথচ সমস্ত লোক নিজ নিজ জায়গা দখল করেছে এবং নিজ নিজ অংশ নিয়ে ফেলেছে।’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যে, পৃথিবীর রাজাদের মধ্যে কোন রাজার মত তোমার রাজত্ব হবে?’ সে বলবে, ‘প্রভু! আমি এতেই সন্তুষ্ট।’ তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য তাই দেওয়া হল। আর ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য (অর্থাৎ, ওর চার গুন রাজত্ব দেওয়া হল)।’ সে পঞ্চমবারে বলবে, ‘‘হে আমার প্রভু! আমি (ওতেই) সন্তুষ্ট।” তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য এটা এবং এর দশগুন (রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হল)।” এ ছাড়াও তোমার জন্য রইল সে সব বস্তু, যা তোমার অন্তর কামনা করবে এবং তোমার চক্ষু তৃপ্তি উপভোগ করবে।’ তখন সে বলবে, ‘আমি ওতেই সন্তুষ্ট, হে প্রভু!” [সহিহ মুসলিম : ১৮৯, তিরমিযি : ৩১৯৮]