• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক সকল ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতে কাজ করছে বিএসটিআই: প্রধানমন্ত্রী চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

শ্রিংলার সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যেসব বার্তা দিলো

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

 


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে অংশ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় এসেছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। 

দুই দিনের সফরে সোমবার সকালে ঢাকায় আসার পর দিনভর ব্যস্ত সূচি পার করেন শ্রিংলা। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ (কানেকটিভিটি) সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলেছেন অংশ নেওয়া বিভিন্ন বৈঠকে।  ওইসব বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু ও সীমান্ত নিয়ে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি, পানিবণ্টন চুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটির অবস্থান তুলে ধরেন।  পাশাপাশি দেশটির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে পরিষ্কার অবস্থান তুলে ধরেন শ্রিংলা।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রিংলার এই সফরে বাংলাদেশ সম্পর্কে  ভারতের অনেক বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব‌্য পাওয়া গেছে।  কিছু বিষয়ে সম্ভাবনাও দেখা গেছে।  তার বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে অভিন্ন সাত নদীর পানি বণ্টন চুক্তির।

চলতি বছরই অভিন্ন সাত নদীর পানি বণ্টনে চুক্তির ইঙ্গিত:  অভিন্ন সাত নদীর পানি বণ্টনে চুক্তির বিষয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, আমরা আমাদের কমিটমেন্ট থেকে সরে যাইনি। তবে ভারতের ফেডারেল সিস্টেমের কারণে চুক্তি করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের ঐকমত্যের প্রয়োজন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে সেই আলোচনা চলছে, আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।  পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অভিন্ন ৫৪ নদীর মধ্যে ৭টি নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা বেশ এগিয়েছে। গত আগস্টে সাতটি নদীর পানি প্রবাহের তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ তথ্যে দুইপক্ষের একমত হওয়া নিয়ে কাজ চলছে। চলতি বছরেই ৭ নদীর পানি বণ্টনের সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি তথা চুক্তির ইঙ্গিত দেন তিনি।

সীমান্তে হত্যা: সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা যতদূর সম্ভব কমানো। তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা দুই দেশের সম্পর্কে বারবার এসেছে। একটি হত্যাও অনেক। এর জন্য আমরা সত্যিকার অর্থে দুঃখিত। কিন্তু একই সঙ্গে বলবো আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর আক্রমণ হচ্ছে। সীমান্তে শুধু বাংলাদেশিরাই মারা যায় না। একই সংখ‌্যক মানুষ ভারতের দিকেও মারা যায়। সীমান্তে হত্যার ঘটনা উভয়পক্ষে ফিফটি ফিফটি দাবি করেন তিনি বলেন, এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে প্রতিফলিত হয় না।

এনআরসি বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না: ভারতের আসামে যে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) হালনাগাদ করা হয়েছে, সেই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরিই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।  তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বারবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা এই ব্যাপারে আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রিংলা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যেতে ভারত সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের ওপর রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ভিত্তিহীন ধারণাও। আমি স্পষ্টভাবেই বলতে চাই,  বাংলাদেশের মানবিকবোধের গভীর প্রশংসা করে ভারত।  আপনারা যে বোঝা বহন করছেন, আমরা তা স্বীকার করি ও সমবেদনা জানাই।’

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েরই একমাত্র সত্যিকার বন্ধু দেশ ভারত মন্তব‌্য করে শ্রিংলা বলেন, ‘যেখানে অন্যদেশগুলো চায়, আপনারা এই সমস্যা অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়ে চলুন, সেখানে আমরা পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে একটা সমাধান চাই।

বাণিজ্য সম্পর্কের ইতিবাচক বর্ণনা: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার বলে জানিয়েছেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিশ্বে আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার ও এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমাদের দুই দেশের সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক একইসঙ্গে বিস্তৃত ও সমন্বিত। যার মধ্যে ৭৫টি আলোচনার বিষয় যা আমাদের স্থায়ী অংশীদারিত্বের একটি শক্তিশালী কাঠামো গঠনের জন্য আমাদের জনগণ ও সরকারকে যুক্ত করেছে।’

বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘১৯৬৫ সালের আগের ছয়টি রেল সংযোগ ২০২১ সাল নাগাদ আবারো চালু হবে, যার ফলে স্থলপথে যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে। প্রান্তিক ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস পরিষেবা চালুর ফলে কলকাতা-ঢাকা এবং কলকাতা-খুলনা রুটে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপেসের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।’

দুই দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করবেন শ্রিংলা।  তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।