• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ত্রিদলীয় জোটের কাজ কী হবে

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার পথে বাধাগুলো দূর করা, জাতীয় শত্রুদের প্রতিরোধ করতে সংগ্রাম গড়ে তোলা এবং জনগণের সমস্যাগুলো অবিলম্বে দূর করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এক যুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভিত্তিতে একটি ঘোষণার কথা জানায়।

আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করেন।

সম্মেলনে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের ১১ জন, ন্যাপ মোজাফফরের ৫ জন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তিনজন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সম্মেলনের ঘোষণাপত্রটির সঙ্গে পরিষদের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।

পরে এক প্রশ্নের জবাবে কোরবান আলী বলেন, তিন দলের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দলের সাধারণ সম্পাদকগণ এই যুক্ত ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদনের পরই যুক্ত ঘোষণাটি সাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়।

দৈনিক বাংলা, ১৫ অক্টোবর ১৯৭৩

দৈনিক বাংলা, ১৫ অক্টোবর ১৯৭৩

যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দেশপ্রেমী রাজনৈতিক সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির সমস্যা ও শত্রুদের মোকাবিলার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তার প্রতি সাড়া দিয়ে এই ঐক্য গঠন করা হয়েছে।

ঘোষণায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বে থাকবে এবং জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় ছাত্র এবং নিজ নিজ আদর্শ কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে।

কোনও রাজনৈতিক দল আস্থা ও আনুগত্য প্রকাশ করে জোটে যোগদান করতে চাইলে তাদের গ্রহণ করা যেতে পারে।

ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু সরকারের বৈদেশিক নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয় এবং দেশের অভ্যন্তরে যে সব দল ও ব্যক্তি বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, দেশের স্বাধীনতা অগ্রগতির স্বার্থে তাদের রুখে দাঁড়ানো জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়।

ঘোষণায় কর্তব্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে বলা হয়, দেশে যে ডাকাতি রাহাজানি গুপ্তহত্যা ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ চলছে, তাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে প্রশাসনযন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। স্বাধীন ও স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির আন্দোলন করতে হবে।

সর্বোপরি দুর্নীতির মূল উৎস প্রশাসনযন্ত্রকে গণমুখী করে তুলতে হবে। ঘোষণায় বলা হয়, উল্লিখিত কর্তব্যগুলো সম্পাদনের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঐক্যজোটের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করা দরকার।

ডেইলি অবজারভার, ১৫ অক্টোবর ১৯৭৩

ডেইলি অবজারভার, ১৫ অক্টোবর ১৯৭৩

সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোরবান আলী ছাড়াও তিনটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জানান, কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হবে এবং সরকার এর সহযোগিতায় কাজ করবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামত চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ভিত্তিতেই ঐক্যজোট গঠিত হয়েছে এবং যুক্ত ঘোষণায় উল্লেখ করা না হলেও দলের অভ্যন্তরে এখন থেকে এই মূলমন্ত্রকে মুজিববাদ বলে অভিহিত করা হবে।

ন্যাপ প্রধান মোজাফফর আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নামে কী এসে যায়।’ কিন্তু কমরেড আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রতি অবিচল থেকেই জোটে যোগ দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে চারটি মূলনীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কোরবান আলী বলেন, রাজনৈতিক দল ও সরকার সম্পূর্ণ পৃথক জিনিস। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ ঐক্যজোট সম্পর্কিত কোনও প্রশ্নের জবাব দেবে না।