• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ

স্বাধীনতাবিরোধী অপপ্রয়াস

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২২  

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এদিন জিয়াউর রহমানের সঙ্গীরা খালেদ মোশাররফসহ আরও অনেককে হত্যা করেছিল। অথচ দেশপ্রেমিক খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন জিয়াউর রহমান গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে আর যা করেছিলেন তা এ দেশকে নয়া পাকিস্তানে পরিণত করেছিল। বিশেষত, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনি মোশতাক ও জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতাকে জেলের ভেতর হত্যা এবং ১৯৮১ সাল অবধি কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বিচারের নামে প্রহসন করে নিষ্ঠুরভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কিংবা গুলি ও গুম করে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসকে করা হয় কলঙ্কিত। সেদিনের সিপাহীদের চেহারা ও আচরণ নিয়ে কর্নেল শাফায়াত জামিল রচিত ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইতে লেখা হয়েছে- ‘সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নেয়া সিপাহীরা ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত এবং তারা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যাটালিয়নে ছিল না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যড়যন্ত্র এবং জঘন্য হত্যাকা-ে লিপ্ত হওয়ার জন্যই বিশেষ মহল ৭ নভেম্বরের হত্যাকা- ঘটিয়েছিল।
আর বিশেষ মহলের নেপথ্যে কারা ছিল তা জাতির নিকট অত্যন্ত স্পষ্ট।’ ৭ নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা নিয়ে জনৈক গবেষকের মন্তব্য হলো ‘৭ নভেম্বর প্রথম প্রকাশ্যে হত্যার শিকার হন ২ জন সেক্টর কমান্ডার ও ১ জন সাব সেক্টর কমান্ডার। আর এই ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে ২১ জুলাই ১৯৭৬ সালে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন আরেকজন সেক্টর কমান্ডার।
এছাড়া সেনাবাহিনীর ভেতরে ১৩ জন হত্যার শিকার হন। স্বাধীনতাযুদ্ধেও কোনো সেক্টর কমান্ডারকে প্রাণ হারাতে হয়নি।’
লেখা বাহুল্য, জেনারেল জিয়াউর রহমান তার পাঁচ বছরের অবৈধ শাসনামলে প্রায় ২১টি অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২০টি অভ্যুত্থান থেকে বেঁচে গেলেও ২১তম অভ্যুত্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর অধিকাংশই ছিল ১৯৭১ সালের সেইসব মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের সমন্বয়ে গঠিত, যারা জিয়ার পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে সম্পর্ক সহ্য করতে পারেননি। তিনি এসব আন্দোলন দৃঢ়ভাবে দমন করেন। হত্যা করেন সশস্ত্র বাহিনীর অজস্র কর্মকর্তাকে।

জিয়ার আমলে ১৯৭৭ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল স্থল ও বিমানবাহিনীর প্রায় ১০০ জন সেপাই। এতে বিমানবাহিনীর একজন অফিসারসহ ২১ জন অফিসার ও সেনা নিহত হন। বিদ্রোহী সেনা মিলে মোট ২০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে এই ঘটনায় বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তার আমলে ভারত থেকে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকা নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রায় দেড় সপ্তাহের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পর ঢাকায় নিয়ে আসা ওই জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার অবসান হয়েছিল ৫ অক্টোবর ১৯৭৭।
ওই ছিনতাই ঘটনার মধ্যেই ঘটেছিল জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিমান বাহিনীর বিদ্রোহ। আর বিদ্রোহী বিমানবাহিনীর সদস্যদের নির্মমভাবে খুন করে জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করেছিলেন জিয়া। ৭ নভেম্বরের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী সরাসরি দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি ও শাসন কাজে জড়িয়ে পড়ে। এতে করে আমাদের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্যই বলা হয়, জিয়ার মতো সামরিক শাসকদের পাকিস্তানপন্থা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিই এ দেশের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছিল। ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহে শুরুর দিকে খালেদ মোশাররফ ছিলেন মূল নায়ক। অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান, হত্যাকা- ও নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়েই জিয়া ক্ষমতায় চলে আসেন। সামরিক শাসনের রাজনীতি পুনরায় চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তার ‘বাংলাদেশ : রক্তাক্ত অধ্যায় (১৯৭৬-৮১)’ বইতে ৭ নভেম্বর নিয়ে লিখেছেন, ‘সেদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড স্ট্রাকচার সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে এবং চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ধারণ করে। এরকম অস্থিতিশীল অবস্থা পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে ঘটেছে বলে মনে পড়ে না এবং কারও পক্ষে কিছু বলার বা করারও ছিল না। ৭ নভেম্বরের রেশ থেকে যায় দীর্ঘদিন এবং সেনাবাহিনীতে ক্যু স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ৭ নভেম্বরের পর থেকে জেনারেল জিয়া হত্যাকা- পর্যন্ত সর্বমোট ২১টি ছোট-বড় সশস্ত্র রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হয় এবং ২১তম অভ্যুত্থানে নিহত হয় জিয়াউর রহমান।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের কিছুদিন পর অভ্যুত্থান এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ৭ নভেম্বরে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটেছিল। একের পর এক এসব ঘটনায় তখন বিচলিত ছিল দেশের সাধারণ মানুষ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার পর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের হত্যা করে আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাবকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন।
লেখা বাহুল্য, সামরিক শাসক জিয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এবং পাকিস্তানপন্থার পক্ষাবলম্বন করে পরাজিত পাকিস্তানপন্থার সমর্থকদের সমর্থন আদায় করে নেন। কেবল সমর্থন আদায় নয়, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার সফল অধিনায়ক ছিলেন তিনি। মূলত ৭ নভেম্বর তার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার দিনটি ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত, যা এদেশের ইতিহাসের চরম কলঙ্কজনক অধ্যায়।