• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ

নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও বাংলাদেশ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২২  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশেরও বেশি নগর এলাকায় বসবাস করে, যা ২০৫০ সাল নাগাদ ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন নিশ্চিতে কাজ করে নগর। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যাই হোক, শহরগুলোতে বসবাসকারী ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন লোকের বেশিরভাগই পর্যাপ্ত বাসস্থান, পরিবহন, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়ুর গুণমান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়। এর সঙ্গে আছে দূষণের অন্যান্য রূপ। যেমন শব্দ, পানি এবং মাটিদূষণ, মাত্রাতিরিক্ত তাপ নির্গমন, হাঁটা বা সাইকেল চালানো এবং সক্রিয় জীবনযাপনের জন্য জায়গার অভাব, যা শহরগুলোকে একটি অসংক্রামক রোগের মহামারির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। শহরের ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে, যেখানে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। শহুরে এলাকার ৯১ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। অস্বাস্থ্যকর, প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা শহুরে জনগণের মধ্যে বেশি। নগরবাসী পরিবহন, রান্না ইত্যদির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে। যে কারণে ৬০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। এ কারণে আশপাশের গ্রামীণ এলাকার তুলনায় নগরবাসী বেশি তাপমাত্রা অনুভব করে। এ সবই নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এইচআইভি/এইডস, যক্ষ্ণা, নিউমোনিয়া, ডেঙ্গু এবং ডায়রিয়ার মতো সংক্রামক রোগ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, হাঁপানি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ, সহিংসতা ও আঘাত, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা রোগের তিন গুণ স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয় শহরবাসী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬৫১৫৮৬১৬ জন এবং শহরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৫২০০৯০৭২।
শহুরে এলাকায় কিছু পরিষেবা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সেবা প্রদানকারীর মাধ্যমেও পরিচালিত হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো মূলত উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহের তিনটি নিম্নস্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ড পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩১৬টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এবং উপজেলা পর্যায়ে ৪২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোই পাবলিক সেক্টরের পরিষেবা সরবরাহের ৩১ শতাংশ সম্পন্ন করে থাকে।
যদিও বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় একটি শক্তিশালী সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক রয়েছে, তবে শহরাঞ্চলে অনুরূপ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অভাব। মোট ১১টি সিটি করপোরেশন এবং ১৪টি পৌরসভার ১৭ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে সেবা প্রদান করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দরিদ্রদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধান (অন্তত ৩০ শতাংশ পরিষেবা বিনামূল্যে), স্থানীয় সরকার এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা, রোগীবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সহজ এবং কম খরচে অ্যাক্সেসযোগ্যতা, কৈশোর কাউন্সেলিংয়ের জন্য কিশোর কোণ, স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিষেবা, কম খরচে মানুষের জরুরি স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে এ প্রকল্প তৈরি হয়।
জেলা হাসপাতাল বা সাধারণ হাসপাতাল প্রাথমিক স্তরের রেফারেল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিশেষ রোগ যেমন কার্ডিয়াক, নিউরোসায়েন্সসহ মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। বিভিন্ন ধরনের তৃতীয় স্তরের হাসপাতাল যেমন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানে সহায়তা প্রদান করে। সারাদেশে ৬২টি জেলা হাসপাতাল রয়েছে এবং প্রতিটি জেলায় রাজশাহী ও ঢাকা ছাড়া অন্তত একটি হাসপাতাল রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ১১টি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে।
স্বাস্থ্যসেবার প্রায় ৬৩ শতাংশ চিকিৎসা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত প্রদান করছে। একদিকে যেমন পাঁচতারকাবিশিষ্ট বিলাসবহুল হাসপাতাল রয়েছে, তেমন রয়েছে নিম্নমানের ক্লিনিক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তিন ধরনের। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়িক হাসপাতাল বা ক্লিনিক, বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং দেশি বা বিদেশি এনজিওচালিত প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এই মুহূর্তে দেশে মোট ১২ হাজার ৫৮০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। নগর স্বাস্থ্যসেবাকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে কর্মপরিকল্পনা। বসে নেই উন্নয়ন সংস্থাগুলোও। আমরাও মনে করি, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিশ্চিত হবে নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। পল্লি এলাকার মতো নগরেও শক্তিশালী করতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে আইন সংশোধন করতে হবে। প্রতিটি বস্তি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থানের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে থাকতে হবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী। স্বল্পমূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ থাকতে হবে। প্রতিদিন ডাক্তার থাকতে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বাড়াতে হবে প্রচারণা, যাতে মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালে ভিড় না করে।