• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ

চুরির পর নতুন তালা লাগিয়ে দিতো ‘বাবু চোর গ্রুপ’

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২২  

পাঁচ থেকে সাত মিনিটে সাটার ও তালা কেটে বিভিন্ন দোকান বা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে চুরির পর সটকে পড়ে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র। চুরি শেষে লাগিয়ে দেওয়া হতো নতুন তালা। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ চক্রের অনেকেই ছোট বেলা থেকে চুরির সঙ্গে জড়িত। চুরির সময় সিসি ক্যামেরা বা অন্যের নজর এড়াতে ব্যবহার করতেন ছাতা বা লুঙ্গি।

সোমবার (৭ নভেম্বর) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এ তথ্য জানান।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, রাজধানীর মাতুয়াইল, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ‘তালা কাটা চোরচক্রের’ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। তারা হলেন- দলনেতা মো. বাবু, সহযোগী আলমগীর হোসেন মালু, মো. রুবেল ও মো. ইসহাক ওরফে সাগর। দলনেতা বাবুর নেতৃত্বে এ গ্রুপে কাজ করে ১০/১১ জন। যাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন চুরির সঙ্গে জড়িত।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৫টি মোবাইল ফোন (সিমসহ ও সিম ছাড়া), দুটি তালা কাটার যন্ত্র, চারটি তালা, ১০টি চাবি, দুটি সেলাইরেঞ্জ, ৫টি স্ক্রু ভাইভার, দুটি ব্যাগ, নগদ ৭৮ হাজার টাকা, দুটি ছাতা, একটি চাদর, দুটি হাতুরি, একটি বড় কেচি, দুটি প্লাস ও একটি ডাল সেলাইরেঞ্জ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, বংশাল থানার একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে খোঁজ মেলে বাবু চোর গ্রুপের। চক্রের মূলহোতা বাবুর সঙ্গে এ গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচয় এবং তারা চট্টগ্রাম শহরের ফিশারীঘাট এলাকায় অনেক আগে থেকে মাছ চুরির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া তারা চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা এলকায় চুরি করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। চুরি তাদের মূলপেশা হলেও দৃশ্যমান পেশা হিসেবে তারা রিকশা চালনা, পুরনো কাপড় ফেরি করে বিক্রি, দোকানে কাজ করে থাকে। গ্রুপে মাঝে মধ্যে তারা নতুন সদস্য সংগ্রহ করে। গ্রেফতার ইসহাক ওরফে সাগর ৫/৬ মাস আগে এ গ্রুপে যোগ দেয়।

ইসহাক ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন নাচের প্রোগ্রামে ড্যানসার হিসেবে অংশ নিতো। পরে এ গ্রুপের সদস্য তার আপন ভাই আকাশের মাধ্যমে গ্রুপে যোগ দেয়।

চোরচক্রের অভিনব কৌশল প্রসঙ্গে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতার চোরচক্রটি হাইড্রোলিক বোল্ট কাটার দিয়ে দোকানের সাটারের তালা এবং কেচি গেইটের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। বংশাল থানা এলাকায় এভাবে তালা কেটে দোকানের ক্যাশ বাক্সে রক্ষিত নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি। গ্রুপের দলনেতা গ্রেফতার বাবু এক'দুজন সঙ্গে নিয়ে সাতদিন আগে বংশালের দোকানটি রেকি করে। পরবর্তীতে চুরির তিনদিন আগে গ্রুপের আরেক সদস্যকে পাঠায় দোকানটি পর্যবেক্ষণ করতে।

চুরির সময় পথচারী পর্যবেক্ষণে থাকে চোরচক্রের সদস্যরা
ঘটনার দিন ৭/৮ জন চুরিতে সরাসরি অংশ নেয়। দুজনের কাজ থাকে দূর থেকে পথচারী পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কথা বলে পথচারীদের ব্যস্ত রাখা। দোকানের সামনে দুজন একই কাজ করে পথচারীদের পর্যবেক্ষণ করে। দোকানের দুই পাশে দুইজন চাদর অথবা ছাতা ধরে থাকে। তখন একজন হাইড্রোলিক কাটার দিয়ে সাটার এবং কেচি গেইটের তালা কেটে একজনকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। দুই পাশে দুইজন চাদর বা ছাতা ধরে রাখায় দুই পাশ থেকে দেখা না যায় ভেতরে কী হচ্ছে। চুরি শেষে কাটা তালা নিজের ব্যাগে ভরে দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। যেন তৎক্ষণাৎ কারো মনে সন্দেহ না জাগে সেখানে চুরি হয়েছে।

এ চোরচক্রের সদস্যরা দুই মাস আগে রাজধানীর মাতুয়াইল ও ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় দুটি বাসা ভাড়া নেয় এবং মাতুয়াইলে দলনেতা বাবুসহ গ্রেফতার আলমগীর হোসেন মালু ও রুবেল এবং কোনাপাড়ার বাসায় গ্রেফতার সাগরসহ বাকি ৬ জন ওঠে।

চক্রের সদস্যরা যোগাযোগ করতো ইমোতে
চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি ডেমরার কোনাপাড়ার বাসায় থাকতো এবং দলনেতা বাবু অপারেশনাল প্ল্যান করে সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। গ্রুপের প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে ইমোতে যোগাযোগ রক্ষা করতো। গ্রুপটি এ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০টি চুরি করেছে।

ঢাকায় এমন ছয়টি সক্রিয় চোরচক্র রয়েছে
লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. শামসুল আরেফিন বলেন, গ্রেফতাদের তথ্যানুযায়ী- এ ধরণের আরও ৫ থেকে ৬টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা স্বর্ণের দোকান, কাপড়ের দোকান, বিকাশের দোকান ও হার্ডওয়্যারের দোকনে চুরি করে। চুরি করা অর্থ বা মালামালের ২০ শতাংশ আগে সরিয়ে ফেলা হয়। এ ২০ শতাংশ অর্থ বা মালামাল দলনেতা বাবু, শরিফ, সুমন, শাহেদ ও যারা দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে তারা নেয়। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ বা মালামাল সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করা হয়।