• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক সকল ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতে কাজ করছে বিএসটিআই: প্রধানমন্ত্রী চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

বিদআত ও তার ভয়াবহ পরিণাম

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

বিদআত (بدعة‎‎) একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ নতুনত্ব, নতুনভাবে উদ্ভাবন, নতুন আবিষ্কার।

বিদআত:

শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কোরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোনো দলীল নেই।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)

এবং সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’

যেমন: আল কোরআনের কোনো আয়াত বা কোনা হাদীস দ্বারা কারো জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে যারা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সে সব সাহাবাগণ বিশ্বনবী (সা.) জীবিত থাকাকালীন অথবা তার মৃত্যুর পরে তার জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেননি। ‘এমনকি রাসূল (সা.) এর একমাত্র পূত্র ইব্রাহিমের ছাড়া বাকী পুত্রগণ তাদের জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা যায়। শুধু মাত্র ইব্রাহিম ষোল মাস বয়সে মারা যায়। এজন্য নবী (সা.) এতই দুঃখিত হন যে, তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

কিন্তু এই আদরের ছেলেটির জন্মের দ্বিতীয় বছরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ‘মৃত্যু’ অথবা ‘জন্মোৎসব’ পালন করেননি। ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় তা হারাম এবং বিদআত। জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস পালনের কোনো প্রমাণ কিংবা চর্চা রাসূল (সা.) কিংবা তার সাহাবীদের মাধ্যমে হয়েছিল বলে কোনো প্রমাণ নাই। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান সুনির্ধারিত ও কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। আর তাই ইসলামে সকল প্রকার বিদআত কাজকর্ম নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে মুহাম্মাদ (সা.) এর একটি বাণী সর্বাধিক আলোচিত যা হলো, ‘তোমরা নতুন উদ্ভাবন পরিহার কর কারণ প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবন হরো বিদআত আর প্রত্যেক বিদআত হলো ত্রুটি।’ (সূনানে আবু দাঊদ, কিতাবুল সুন্নাহ)

হাদিসে আরো বলা আছে যে, প্রত্যেক বিদাআত বা নব আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। (সহী ইবনে খুযাইমা, ৩য় খন্ড, ১৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৮৫)

হুজুরে পাক (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীয়তের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৩২৪৩)

রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৭৬৮)

‘রাসূল (সা.) এর আরো একটি হাদিস রয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫০৬৩)

কোরআনের আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, ‘…আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নিয়ামত আমি পূর্ণ করে দিলাম, আমি তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম…’ (সূরা: আল- মায়িদাহ, আয়াত: ৫:৩)

এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং দ্বীন ইসলামে আর না কোনো কিছু যোগ হবে অথবা না তা থেকে কিছু বাদ পড়বে। বিদআতের বিরোধীতার জন্য এবং আল্লাহর দেখানো পথকে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য এই আয়াত বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা সাহাবীরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন।

‘অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে?’ (সূরা-ইউনূস, আয়াত: ৩২)

‘আমি এ কিতাবে কোনো কিছু বাদ রাখিনি।’ (সূরা: আনআম, আয়াত: ৩৮)

‘অতঃপর যদি কোনো বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ৫৯)

‘রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহন কর এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর ৷ আর আল্লাহকে ভয় করো ৷ নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সূরা: হাশর ৫৯, আয়াত:৭)

অর্থাৎ, ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দীনের মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তা বিদআত বলে গণ্য হবে।

বিদআতের ভয়াবহ পরিণাম:

ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য শয়তানের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে বিদআত। যারা বিদআত সৃষ্টি করে তাদের ওপর মহান আল্লাহ পাকের লানত বর্ষিত হয়। বিদআতের শাস্তি ভয়ানক। নিচে বিদআতের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(১) বিদআতীকে সহযোগিতাকারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ:

আলী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জন্তু জবেহ করে। আর যে জমির সীমা চুরি করে। আর যে মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয়। আর যে বিদআতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম)

(২) বিদআতীর আমল আল্লাহর কাছে অগ্রাহ্য:

আয়েশা (রা.) বর্ণিত রাসূল (সা.) এর একটি হাদিস, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল যা দ্বীনে নেই সে কাজটি আল্লাহ কাছে পরিত্যজ্য।’ (বুখারী ও মুসলিম)

(৩) বিদআতীর তওবা গ্রহনযোগ্য হবে না যতক্ষণ না সে বিদআত সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়:

আনাস ইবনু মালেক (রা.) বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তওবা গ্রহণ করেন না যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণরূপে তওবা করে।’ (তবরানী, সনদ হাসান)

(৪) বিদআত থেকে যে কোনো উপায়ে বাঁচার আদেশ রয়েছে:

ইরবায ইবনু সারিয়া বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘লোক সকল! তোমরা বিদআত থেকে বাঁচ।’ (কিতাবুস সুন্নাহ ইবনু আবী আসিম)

(৫) কিয়ামতের দিন বিদআতী হাওযে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবেঃ রাসূল (সঃ) কিয়ামতের দিন বিদআতী লোকদের থেকে বেশী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন। সাহাল ইবনু সাআদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, আমি হাওযে কাওছারে তোমাদের অপেক্ষায় থাকব। যে ব্যক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার পানি পান করবে তার কখনো তৃষ্ণা থাকবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদেরকে আমি চিনব। তারাও আমাকে চিনবে। আমি মনে করব তারা আমার উম্মত তার পরও তাদেরকে আমার নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে হবে না। আমি বলব এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি জানেন না আপনি দুনিয়া থেকে চলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তার পর আমি বলব, ‘দূর হোক, দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

(৬) বিদআত সৃষ্টিকারীর প্রতি আল্লাহর ফেরেশ্তাসমূহ এবং সব লোকের অভিশাপ হয়ে থাকে:

আসেম (রা.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসূল (সা.) কি মদীনাকে হারাম আখ্যা দিয়েছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। উমুক স্থান থেকে উমুক স্থান পর্যন্ত। এ স্থানের কোনো গাছ কাটা যাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এখানে কোনো বিদআত সৃষ্টি করবে তার ওপর আল্লাহ ফেরেশ্তা এবং লোক সকলের অভিশাপ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

পরিশেষে বলা যায় যে, বিদআত ইসলাম পরিপন্থী একটি গুনাহের কাজ যা সমাজের মধ্যে বিভেদ, বিচ্ছেদের সৃষ্টি করে। এর ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। তাই আমাদের উচিত সকল প্রকার বিদআত থেকে দূরে থাকা এবং বিদআত সৃষ্টি করে এমন সব কাজ বর্জন করা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীন ইসলামের সহীহ পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।