• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

ইতিহাসের বড় টেলিস্কোপ নিয়ে অজানা সব তথ্য

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১  

মহাকাশে সফলভাবে পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্পেস টেলিস্কোপ। এক হাজার কোটি ডলার খরচ করে নির্মিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ-কে বিবেচনা করা হচ্ছে একুশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিশ্রুতিশীল বৈজ্ঞানিক প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে।

গত শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) ফ্রেঞ্চ গায়ানাতে অবস্থিত 'ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি'র লঞ্চপ্যাড থেকে জেডব্লিউএসটি যাত্রা শুরু করে। প্রকল্পের নকশা তৈরি ও গবেষণায় সময় লাগে দীর্ঘ ৩০ বছর। এতো সময় আর অর্থ খরচ করে নির্মিত জেডব্লিউএসটি'র মূল লক্ষ্য– মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রপুঞ্জ আর ছায়াপথের খোঁজ বের করা।

নতুন এই টেলিস্কোপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটি প্রতিফলক আয়না যা ৬ দশমিক ৫ মিটার চওড়া। বিশালাকৃতির এই আয়নার পেছনে সোনার প্রলেপ লাগানো। বর্তমানে হাবল নামে যে মহাশূন্য টেলিস্কোপটি কাজ করছে- তার চেয়ে এটি প্রায় তিনগুণ বড় এবং ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী।

এটির নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানের অন্যতম স্থপতির নামে। মহাশূন্যে এখন হাবল নামে যে টেলিস্কোপটি রয়েছে তার জায়গা নেবে এই জেমস ওয়েব এবং এটি দিয়ে মহাশূন্যের এমন দূরত্ব পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে- যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি।

বিশাল আয়না এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন। প্রথম যে তারাগুলোর আলোয় সাড়ে এক হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল তার অনুসন্ধান করা যাবে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, সেই সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মতো কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মত 'ভারী পরমাণুগুলো’ গঠিত হয়েছিল, যা প্রাণ সৃষ্টির জন্য ছিল অত্যাবশ্যক।

জেমস ওয়েবের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশ কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা -যার ফলে তারা অনুমান করতে পারবেন যে সেগুলোতে আদৌ প্রাণির বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কিনা। এই টেলিস্কোপটি যে কক্ষপথে স্থাপিত হবে তা পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। জেমস ওয়েব সেই বহুদূরের জগতের ছবি তুলতে পারবে যেখানে প্রথম গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তখন অন্যান্য তারার চারদিকে যেসব গ্রহ ঘুরছে- সেগুলোরও ছবি তোলা সম্ভব হবে।

১৬০৯ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও যখন টেলিস্কোপ বা দূরবিন আবিষ্কার করেন তখনই প্রথম দৃষ্টির বাইরের বস্তুগুলো মানুষ দেখতে সক্ষম হয়। সেই দূরবিন দিয়েই মহাশূন্যের বস্তু যেমন বৃহস্পতির চাঁদ দেখা সম্ভব হয়, যা পৃথিবীকে নয়, বৃহস্পতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়।

এর মধ্য দিয়ে মানুষ যে পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বজগৎ কল্পনা করত সেটি চিরকালের জন্য পাল্টে যায়। এর প্রায় চার শ' বছর পর ১৯৯০ সালে হাবল টেলিস্কোপ মহাশূন্যে পাঠানো হলে সূচনা হয় বিশ্বজগতকে জানার ক্ষেত্রে এক নতুন বৈপ্লবিক যুগের। হাবল টেলিস্কোপে নব্বইয়ের দশকের অপটিক্যাল প্রযুক্তির সর্বশেষ সুবিধাগুলো যুক্ত করা হয়।