• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

এনআইডি কেলেঙ্কারির রহস্য উন্মোচনে ছদ্মবেশ ধরে তদন্ত দল

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

কখনো এনআইডি পেতে আগ্রহী রোহিঙ্গা, আবার কখনো এনআইডি প্রস্তুতকারী দালাল। এভাবেই ছদ্মবেশ পরিবর্তন করেই রোহিঙ্গাদের এনআইডি কেলেঙ্কারির রহস্য উন্মোচন করেছে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত দল। তাদের অনুসন্ধান বলছে, দালালদের সহযোগিতায় উখিয়ার কতুপালং আশ্রয় শিবির থেকে চট্টগ্রামের নির্বাচন কমিশন হয়ে ঢাকার এনআইডি উইং পর্যন্ত অন্তত চারটি ধাপ পেরিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছে রোহিঙ্গারা। আর অনিয়মের অভিযোগে সাত বছর আগে চাকরিচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও এনআইডি সার্ভারে ঢোকার এক্সেস ছিল সত্য সুন্দর এবং সাগরের।


বাংলাদেশের এনআইডি সার্ভারে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি অনুসন্ধান করতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে প্রথমেই গতি হারিয়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত দল। কিন্তু রহস্যের দ্বার খুলে যায় তদন্ত টিমের সদস্যরা উখিয়ার কতুপালং আশ্রয় শিবিরে পৌঁছার পর। এনআইডি দালাল ছদ্মবেশে সেখান থেকে আটক করা হয় ৫ জনকে।

আটকদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর এবার তারা কক্সবাজার এসে এনআইডি প্রত্যাশী রোহিঙ্গার ছদ্মবেশ নেন। কক্সবাজারের দালালরাই এনআইডির ছবি তোলার জন্য তাদের নিয়ে আসে চট্টগ্রামে। নগরীর দালালদের মাধ্যমেই চিহ্নিত হয় নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন।

নির্বাচন কমিশন তদন্ত টিম প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে এক শ্রেণির দালালকে নিয়ে আসা হয় যেখানে ছবি তোলা হয়। ছবিটা তোলা হয় অফিসের বাইরে।’

নির্বাচন কমিশন তদন্ত টিম প্রধান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আন্দরকিল্লা ও চ্যারাগি পাহাড় এখান থেকে একটি দল তাদের নিয়ে যায় যেখানে মূলত কাজ হয়। সে সূত্র ধরে মূলত আমরা চট্টগ্রামে চলে আসি। কক্সবাজারে বসে একটা ধারণা পাই ডিভাইসগুলো চট্টগ্রামে ব্যবহার হচ্ছে।’

জয়নাল একা নয়, তার সহযোগী ছিল সাত বছর আগে অনিয়মের অভিযোগে এনআইডি উইং থেকে চাকরিচ্যুত সত্য সুন্দর এবং সাগর নামে দু’জন। এখন পর্যন্ত এ দু’জন আইনের আওতায় না আসায় পরবর্তী ধাপে পৌঁছাতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

সিএমপি উপ-কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান বলেন, ‘সত্য সুন্দর হলো হারানো এনআইডি নিয়ে কাজ করতো। আর সাগর সার্ভারে ডাটাগুলো প্রবেশ করাতো।’

সিএমপি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আরো কোনো কর্মচারী, কর্মকর্তা জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে কাজ করছি। এছাড়া এখন পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা এনআইডি পেয়েছে তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

তবে ঘটনার অনুসন্ধানকারী দুদকের দাবি, রোহিঙ্গাদের তথ্য নিবন্ধন থেকে শুরু করে ছবি তোলা কিংবা তথ্য আপলোড দিয়ে এনআইডি কার্ড প্রস্তুত করা সামান্য অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দুদকের উপ পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন।

তিনি জানান এর পেছনে থাকা শক্তিশালী চক্রের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদকের বিশেষ দল। জয়নাল আবেদীনের ১০ জন নিকটাত্মীয়ের পাশাপাশি আরো একজন কর্মচারীর ১৬ জন আত্মীয় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদে।

তবে এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ৭টি ল্যাপটপ হারানোর তথ্য পেয়েছে ইসির তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ৪টি, রাঙামাটি এবং কাপ্তাই থেকে দু’টি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়। এছাড়া আরো একটি ল্যাপটপ হারিয়েছে জেলা কার্যালয় থেকে উপজেলা কার্যালয়ে নেয়ার সময়। এসব ল্যাপটপ থেকেই রোহিঙ্গাদের তথ্য এনআইডি সার্ভারে যুক্ত করা হয়।