• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

টিনিটাস : কানে অস্বাভাবিক শব্দ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯  

বাহ্যিক কোনো উৎস ছাড়াই অনেকে কানে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। এ রকম কিছু সমস্যা নিয়ে প্রায়ই রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘টিনিটাস’। এটি আসলে কোনো রোগ নয়; বরং বিভিন্ন রোগের উপসর্গ।

 

ধরন

কানে অস্বাভাবিক শব্দগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন—শোঁ শোঁ, গুনগুন, হিস হিস, টিক টিক বা বাঁশি, ঘণ্টা, বাতাসের প্রবাহ, ঝিঁঝি পোকা, মৌমাছি এমনকি ঢেউয়ের গর্জনের মতো শব্দ। এসব শব্দের তীব্রতা হয় মৃদু থেকে তীক্ষ। সাধারণত এক কানে অনুভূত হয় আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয় কানেও এ রকম শব্দ অনুভূত হতে পারে। কানে অস্বাভাবিক এসব শব্দ মূলত দুই ধরনের হয়। সাবজেকটিভ ও অবজেকটিভ।

সাবজেকটিভ : বাইরের কোনো কোলাহল ছাড়া রোগী যখন কোনো অর্থহীন শব্দ শুনতে পান, কারণভেদে এর তীব্রতা ও স্থায়িত্ব ভিন্ন হয়, কেউ নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর শোনেন আবার কেউ বা একটানা শুনতে পান। এতে রোগীর ঘুমের সমস্যা হয়, কাজে মনোযোগিতা হ্রাস পায়, পরবর্তী সময়ে তাঁরা বিষাদগ্রস্ততায় ভুগতে পারেন।

অবজেকটিভ : এ ক্ষেত্রে শব্দের উৎপত্তি রোগীর শরীরে বলে মনে করা হয়। যেমন—বায়ুপ্রবাহের শব্দ, ঘূর্ণায়মান রক্তের প্রবাহ, কান ও মাথার ভেতরের মাংসপেশির সংকোচন ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে স্টেথেস্কোপের সাহায্যে শব্দ শোনা যায়।

অডিটরি হ্যালুসিনেশন : টিনিটাসের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হলো, বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যেমন—সিজোফ্রেনিয়া, খিঁচুনি, মস্তিষ্কে টিউমার ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে।

 

কারণ

♦   শ্রবণশক্তি হ্রাস, বয়সজনিত, কোলাহলপূর্ণ স্থানে বসবাস, খৈল জমা, পর্দা ফেটে যাওয়া বা ইনফেকশন হওয়া, আঘাত পাওয়া, পানি প্রবেশ করা, কিছু অসুখ যেমন—একুয়াস্টিক নিউরোমা, ল্যাবিরিন্থাইটিস, মেনিয়ার্স ডিজিজ, অটোস্কেলোরোসিস ইত্যাদি।

♦   আবার কানবহির্ভূত কিছু সমস্যার কারণেও এই রোগ হতে পারে, যেমন বংশগত, কিছু ওষুধের প্রভাব, যেমন অ্যাসপিরিন ও অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন অতিরিক্ত কফি পান, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োগ, মারাত্মক অপুষ্টি বা হঠাৎ বেশি ওজন হ্রাস, রক্তনালির কিছু সমস্যা, যেমন ক্যারোটিড অ্যাথেরোসেক্লরোসিস, নার্ভের কিছু সমস্যা, যেমন মাল্টিপল সেক্লরোসিস, মাইগ্রেন, শারীরিক অন্যান্য কিছু অসুখ, যেমন রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডজনিত অসুখ ইত্যাদি।

 

উপসর্গ

♦   অবশ অবশ লাগা বা ঝিমঝিম করা।

♦   কানে শুনতে অসুবিধা বা না শোনা।

♦   মাথা ঘোরার সমস্যা।

♦   এক সপ্তাহের বেশি সময় টিনিটাস থাকা, ঘন ঘন টিনিটাস।

♦   শরীরের ভারসাম্য বজায় না থাকা।

♦   বমি হওয়া ইত্যাদি।

 

এ রকম উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

পরিত্রাণের উপায়

♦   উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে কাজ বা বসবাস না করা। সেটা সম্ভব না হলে শব্দ কম শুনতে এয়ার প্লাগ ব্যবহার করা।

♦   কাত হয়ে কানের নিচে হাত রেখে না ঘুমানো।

♦   হেডফোনে কিছু শুনলেও বেশি উচ্চৈঃস্বরে না শোনা।

♦   ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

♦   কটন বাড বা এ ধরনের কোনো কিছু দিয়ে কান না চুলকানো। এতে কানের পর্দা ফেটে গিয়ে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।

♦  কানে ময়লা জমলে তা বের করতে কাঠি ব্যবহার না করে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা। এতে কানের ময়লাও বের হবে, পর্দাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।