• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

দাইয়ুস জান্নাতে যাবে না

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯  

 

যদিও আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে প্রথম কাতারে আদায় করেন, যদিও তাহাজ্জুদ পড়েন, যদিও আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশি মুসলিম ভাইয়ের হকের ব্যাপারে বেশ সচেতন, মোটকথা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করেন, কিন্তু যদি আপনার পরিবারে পর্দা সম্পর্কে উদাসীন থাকেন, আপনার মা, বোন, মেয়েকে পরপুরুষের সামনে যেতে বাধ্য করেন অথবা বাধা না দেন কিংবা তাদের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন, তাহলে বিশ্বাস করুন আপনার নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ বাকি সব আমল কোন কাজে আসবে না। কারণ তখন আপনি একজন 'দাইয়ুস' ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। আর দাইয়ুস ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। [সুনানুন নাসায়ি : ২৫৬২; মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩৬৫৫] 

দাইয়ুস কে?

নিজের স্ত্রী, মা, বোন কিংবা মেয়ের ব্যাপারে যার কোন গাইরত, আত্মমর্যাদাবোধ (Protective jealousy) নেই, যে নিজের স্ত্রীকে কিংবা তার দায়িত্বশীল পরিবারের মেয়েদের পর পুরুষকে দেখিয়ে আনন্দ পায় কিংবা পর পুরুষের সামনে যেতে কোন ধরনের বাধা দেয় না সেই ব্যক্তি দাইয়ুস। 

আর দাইয়ুস ব্যক্তি জান্নাতে তো যাবে না; জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হচ্ছে দাইয়ুস ব্যক্তি; যাদের দিকে আল্লাহ তাকিয়েও দেখবেন না। [মুসনাদে আহমাদ] 

ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

‘আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচাইতে নিম্ন শ্রেণি হচ্ছে দাইয়ুস ব্যক্তি। তার জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। কারণ তার মধ্য থেকে গাইরত বা আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে গেছে। মুসলিম পুরুষেরা উম্মাহর মুসলিমাদের ব্যাপারে গাইরত থাকা প্রয়োজন। তার উচিত তার স্ত্রীর সম্মানের ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা, স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা, তার সামনে কেউ যদি তার স্ত্রীর নিন্দা করে কিংবা তার স্ত্রীর সম্পর্কে কটু কথা বলে সে তাকে ডিফেন্ড করবে। যদিও এটি প্রতিটি মুসলিমের অধিকার কিন্তু বিশেষ করে এই সম্মানটুকু প্রতিটি স্ত্রী তার স্বামীর কাছে বিশেষভাবে প্রাপ্য। একজন দায়িত্বশীল স্বামী কখনও তার স্ত্রীকে বেগানা পুরুষের সামনে যেতে, কথা বলতে বাধ্য করবে না। কিংবা তার স্ত্রী, মা-বোন এর সাথে অন্য কারও এমন আচরণ সহ্য করবে না, যেটা তার আত্মসম্মানবোধে লাগে।’ 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء

‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৩৪] 

একদা মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে কথা প্রসঙ্গে সা’দ ইবনু উবাদা (রা.) বলেন, ‘আমি যদি আমার স্ত্রীর সাথে কোন পর-পুরুষকে দেখি তাহলে আমি তাকে সোজা তরবারি দ্বারা আঘাত করে হত্যা করব।’

তার এ উক্তিটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌছালে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধে বিস্মিত হচ্ছ? আল্লাহর কসম! আমি তার চেয়েও বেশি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আর তিনি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হওয়ার কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (সর্বপ্রকার) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। ক্ষমা চাওয়াকে আল্লাহর চাইতে বেশি পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এ জন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মস্তুতি আল্লাহর চেয়ে বেশি কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন।’ [সহিহ বুখারি]

শেষ করবো ইমাম ইবনুল কাইয়িমের একটি অসাধারণ উক্তি দিয়ে। তিনি বলেন,

‘যদি গাইরত (আত্মমর্যাদাবোধ) মানুষের হৃদয় ত্যাগ করে চলে যায়, তবে সে হৃদয় থেকে ঈমানও হারিয়ে যাবে।’