• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ সাবেক এমপি আউয়াল কারাগারে

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  


  দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মামলায়     পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও নেছারাবাদ) আসনের   সাবেক এমপি ও জেলা আ’লীগের সভাপতি   এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী  লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান এর আদালত মঙ্গলবার (৩ মার্চ)  এক আদেশে   তাদের  কারাগারে প্রেরন করেন।
এর আগে   গত ৩০ডিসেম্বর     দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে  ৩টি মামলা দায়ের করেন ।   এর ১টিতে  সাবেক এমপি আউয়ালের সাথে তার স্ত্রী  লায়লা পারভীনকে ও  আসামী করা হয়।  ওই সব মামলায় তিনি ও তার স্ত্রী গত ৭ জানুয়ারী উচচ্ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জন্য জামিন লাভ করেন। ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদলতের আদেশের মঙ্গলবার (৩ মার্চ)  তিনি স্থানীয় আদালত থেকে জামিন নিতে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার নাজিরপুরের থানার সামনে ও উপজেলা সদরের ভুমি অফিসের পিছনে ৬টি ভূয়া নামে    ৩ শতাংশ সরকারি খাস জমি নিজের দখলে নেন। পরে সেখানে তিনি  দ্বিতল পাকা   ভবন তৈরী করে পল্লী বিদ্যুৎকে তাদের অফিস হিসাবে  ভাড়া দেন। এতে চুক্তি করেন এমপি পতœী   মিসেস  লায়লা পারভীন৤  এ জালিয়াতির এ ঘটনার অনুসন্ধানের পর  উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)(এসিল্যান্ড)  দুদক কর্মকর্তাকে বলেছেন, তিনি ওই ছয় ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা ৬ ব্যক্তির অস্তিত্ব  না থাকলেও সাবেক এমপি আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পরভীনের নামে বাড়ির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সব ধরনের প্রমান  পাওয়ার পর দুদক অনুসন্ধান শেষ করে ওই মামলা দায়ের করেছেন।
দুদকের ওই সূত্র আরো জানান, সরকারি খাস জায়গা লিজ নিয়ে ওই জায়গায় স্ত্রী লায়লা পারভীনের নামে  দ্বিতল পাকা ভবন  করে  তা পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে দখলে রাখার অপরাধে দন্ডবধির ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দুদক।
প্রায় একই প্রক্রিয়ায় জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী)    উপজেলার ডাকবাংলোর কাছে একটি সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে  দখল করে সেখানে  তিন তলার একটি  ভবন নির্মান করেছেন। যা পরে আউয়াল ফাউন্ডেশন নামে নামকরন করা হয়।  এমপির ক্ষমতা  প্রয়োগ  করে তিনি এ জালিয়াতির আশ্রয় নেন। ওই অপরাধে একেএমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ  আইনের ৫(২) ধারায়  আরো একটি মামলা দায়ের করেছেন দুদক।
এছাড়া পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া মৌজার জেএল-৪৬, খতিয়ান নং-২৯৩, রাজার পুকুর নামে পরিচিত ৪৪ শতক সরকারি খাস জমি চতুর্দিকে দেয়াল নির্মাণ করে দখলে নিয়ে নেন আউয়াল।   এই অপরাধে আউয়ালের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তৃতীয় মামলা   দায়ের করেছেন দুদক। আর ওই সব মামলা দায়েরের আগে  ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে (আইয়াল)  দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা  জারি করে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে   গত ২০১৭ সালের জুন মাসে  সে সময়ের সরকার দলীয় এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি টাকা ও সম্পদ আত্মসতের অভিযোগ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে দুদকে অভিযোগ দেয়া হয়। পরে তা অনুসন্ধানে নামে দুদক টিম। এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৯ মে এমপি আউয়ালকে পরবর্তী ২৩ মে’র মধ্যে দুদকের প্রধান কার্য়ালয় সেগুনবাগিচায় হাজির হয়ে সম্পদের বিবরনী দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠান। কিন্তু এমপি আউয়াল ওই সময়ে দুদকে হাজিরা  না  দেওয়ায় দুদক  পরবর্তী ১৯ জুন আবারও তাকে নোটিশ পাঠান।  ওই নোটিশে তাকে  ২৭ জুনের মধ্যে হাজির হয়ে সম্পদের বিবরনী দিতে বলা হয়। পরে তিনি হাজির হয়ে বক্তব্য দিলেও সে বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন দুদক।
দুদক সূত্র জানান, আ’লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদে (২০০৮- ২০১৮) পিরোজপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ, গনপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানিউন্নয়ন বোর্ড সহ যে বিভাগে কাজ হয়েছে তাদের প্রতিটি থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিয়েছেন। এমন কি  সরকারিভাবে দুর্যোগ প্রবন এলাকা ইন্দুরকানি ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৪টি ঘুর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান কালে তিনি নগদ ৮০লাখ টাকা ও ২ হাজার ডলার উৎকোচ নেন বলে অভিযোগ পান দুদক।
দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর   জানান, অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে তারা (দুদক) নির্বাচন কমিশন, উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় (পিরোজপুর), একাধীক ব্যাংক সহ ৩০টি প্রতিষ্ঠনের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
জানা গছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী  হিসাবে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর প্রার্থী হিসোবে সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার প্রার্থী ছিলেন৤ কিন্তু এরপরও তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে   নৌকা প্রতীক নিয়ে  প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে  মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এ আসনের সাবেক এমপি  মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে পরাজিত করে প্রথম দফা এমপি হন। পরে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন৤ আর এ দু’বারে তিনি এমপি হয়ে   এ সব দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে দেয়া বিভিন্ন দূর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে দুদক তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ পেয়েছেন তা হলো-তার নিয়ন্ত্রনাধীন বুশরা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সুভাষ এন্টারপ্রাইজ নামের ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা পিরোজপুরের  ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রন করেছেন। এ ছাড়া তিনি কাজ পাওয়া অন্য সকল ঠিকাদারের কাছ থেকে শতকরা ১০ ভাগ কমিশন নিয়েছেন। তার ২ আমলে পুলিশের নিয়োগ দেয়া ৭৬৪ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে  নিয়োগ বানিজ্য করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আড়াইহাজার শিক্ষক ও ৩২৪ জন নৈশ প্রহরী নিয়োগে বানিজ্যের অভিযোগ। আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদ বানিজ্য। অবৈধ টাকায় ৪টি কার্গো জাহাজের মালিক। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরিতে বানিজ্য, আর চাহিদা মতো টাকা না দিলে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। জোর করে হিন্দুদের  সহ অন্যদের প্রায় ডজন খানেক বাড়ি দখল ও লিখে নেয়া। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নিজের পছন্দের বাহিরের প্রার্থীদের বিরোধীতা করে অর্থের বিনিময়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের  সমর্থন করা।