• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

বিএনপির থেকে পাত্তা না পেয়ে `কোথাও নেই ঐক্যফ্রন্ট!`

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯  

 


বিগত একাদশ জাতীয়  সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি সহ একাধিক রাজনৈতিক দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে ''জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'' নামক একটি নির্বাচনী জোটের। দলীয় ভাবে জোটটির নেতৃত্বে বিএনপি থাকলেও দলের প্রধান কর্ণধার ছিলেন গণফোরামের ড. কামাল। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবাসে থাকায় তার অনুপস্থিতে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে জোটটির দলগুলোর মাঝে রাজনৈতিক কর্মসূচি, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি, প্রার্থী নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হতে হয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করা বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে। নির্বাচনের পর থেকেই ভাঙ্গনের সুর বাজতে শুরু করে ঐক্যফ্রন্টে। এরই ধারাবাহিকতায় এদেশের রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে "জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট" অধ্যায়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্ট নামক জোট কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। জনবান্ধব কোনো ইস্যুতে নেই তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া, দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো কর্মসূচি। নিজেদের মধ্যেও নেই কোনো কথাবার্তা। নেতাদের নিজেদের মধ্যেও নেই কোনো যোগাযোগ। বিএনপি বাদে ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা বলছে, স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে ঐক্যফ্রন্টকে পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে লন্ডন থেকে তারেক রহমান তাদের ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ভোটে হেরে সেই তারেকের নির্দেশেই অকার্যকর হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাম্প্রতিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনের পর কয়েকটি কর্মসূচি ডেকেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যার কোনোটাই বাস্তবায়িত হয়নি। ২২ ফেব্রুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ ‘নির্বাচনের অনিয়ম’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে একটি গণশুনানি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই গণশুনানির তথ্যগুলো একটি বই আকারে বের করে সেগুলো আদালতে জমা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। তবে ছয় মাস হলেও সেই বই আলোর মুখ দেখেনি। অন্য একটা কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও পুননির্বাচনের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিলো ঐক্যফ্রন্ট। তবে মানববন্ধনের আগের দিন ‘প্রেস ক্লাবের সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির অজুহাতে' তা বাতিল করা হয়। স্বাধীনতা দিবসের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের ঘোষণা দিলেও পরে ‘হল বরাদ্দ পাননি’ বলে সেটিও বাতিল করেন তারা। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল একটি কর্মসূচি দেন তারা। ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজীতে আগুন দিয়ে হত্যা করা নিহত শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় শাহবাগ চত্বরে গণজমায়েতের ডাক দেয় জোটটি। তবে একদিন আগে ‘অনিবার্য কারণবশত’ সেটিও বাতিল করা হয়। জোটের নেতাদের সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছিল চলতি বছরের ১০ জুন। বৈঠক থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত তো আসেইনি বরং এর এক মাস পর সংবাদ সম্মেলন করে জোট ছাড়েন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে অনেকটাই বিরক্ত শরিক দলগুলো। অনেকটা প্রকাশ্যেই অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির প্রতি। দলগুলোর অধিকাংশ নেতার অভিযোগ, একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে একটি জোট ও একজন ‘মুরুব্বি রাজনীতিবিদ’র ছায়া চেয়েছিল দলটি। ঐক্যফ্রন্টের বিদায়ী অনেক নেতার সূত্রে জানা যায় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরুর জন্য  স্কাইপে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন দলটির নেতারা। তার পরামর্শেই ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে তার নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাকে ঢাল হিসেবে নির্বাচনে গিয়েছিল বিএনপি। এখন নির্বাচন শেষ, ড. কামাল শেষ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও শেষ! নির্বাচনের পর থেকেই মূলত কবর রচনা শুরু হয় ঐক্যফ্রন্টের, এখন শুধু দাফনের অপেক্ষা।