যেভাবে ছাত্রদল নেতার মামলায় বাতিল হচ্ছে ‘বিএনপির নিবন্ধন’

আইনি প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা আরো ভয়ানক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপিকে। এমনকি আইনি মারপ্যাঁচে বাতিল হতে পারে বিএনপি’র নিবন্ধনও।

গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ছাত্রদলের সাবেক ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক আমান উল্লাহ ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার পরেই বেরিয়ে এসেছে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও লঙ্ঘনের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রদল হচ্ছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন। এতে উল্লেখ আছে, সংগঠনটি নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। বিএনপির কোনো নেতা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৩ ধারায় বলা আছে, ছাত্রদল ও শ্রমিক দল নিজ নিজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

কিন্তু গত ৩ জুন রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপি’র প্যাডে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যা বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও লঙ্ঘনের নজির।

পরবর্তীতে ২৩ জুন একইভাবে বিএনপি’র দলীয় প্যাড ব্যবহার করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ ১২ নেতাকে বহিষ্কার করে। এটাও বিএনপি’র গঠনতন্ত্র ও আরপিও- এর সরাসরি লঙ্ঘন, বলছেন আইনজীবীরা। এছাড়াও একইদিনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদলের কাউন্সিল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন না করে বিএনপি নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যাচাই-বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটি গঠন করেন। যা বিধিসম্মত তো হয়নি বরং সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র ও আরপিও- এর লঙ্ঘন।

পরবর্তীতে গত ২৪ জুন ছাত্রদল কাউন্সিল আয়োজনে গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৫৭৫ জন কাউন্সিলর বা ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে বিএনপির কোনো নেতা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন বিএনপির গঠনতন্ত্র যাচাই বাছাই না করেই মনগড়া এসব প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিএনপি’র দলীয় প্যাডে প্রকাশ করেন। আর এসবের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রদলের সাবেক ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক আমান উল্লাহ ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছিলেন।

এমতাবস্থায় আইনজীবীরা বলছেন, কাউন্সিল প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিএনপি নেতাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং তাদের স্বাক্ষরে সব কার্যক্রম হয়েছে, যা আইনত গঠনতন্ত্রবিরোধী। আবার ছাত্রদলের চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রও নেই। যা আছে তা-ও খসড়া।