• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ

শীতে নাক কান গলার যত সমস্যা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এ সময় বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। শীতে নাক-কান-গলার সমস্যা বাড়ে।
আসলে নাক, কান, গলার অসুখগুলোর মধ্যে পরিবেশগত ও আবহাওয়ার তারতম্যের একটি প্রভাব রয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষভাবে এটি দেখতে পারি। যদি আমাদের দেশকে আমরা ষড়ঋতুর দেশ বলি, সব ঋতু হয়তো এখন খুব প্রকটভাবে নেই, তারপরও শীত থেকে গ্রীষ্ম, গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, এই যে একটি অতিক্রম করা, এক ঋতু থেকে আরেক ঋতুতে, এতে নাক, কান, গলার রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

প্রথমে আগে অবস্থাটা একটু বলা দরকার। কেন নাক-কান-গলার অসুখ একটি ভিন্ন মাত্রা পায়, বিশেষ করে শীতকালে? আমাদের দেশে শীতটা আসলে এখন খুব স্বল্পস্থায়ী। এরপরও ঋতুর যে পরিবর্তন, এটি কিন্তু প্রকৃতিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর নাক-কান-গলার অসুখ কেন বাড়ে? এর কারণ হলো, নাক কিন্তু শরীরের এয়ারকন্ডিশনার। আমাদের শরীরে বাতাস ঢোকার একমাত্র রাস্তা হলো নাক। নাককে আমরা হয়তো সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে চিন্তা করে থাকি। তবে এই নাকের কাজ কিন্তু অনেক। যেই বাতাসটা আমাদের ফুসফুসে যায়, একে পরিশোধন করে। ধুলা, ধোয়া এসব পরিশোধন করে ছাঁকনির কাজ করে। বাতাসে হয়তো তাপমাত্রা বেশি থাকে, একে হয়তো সে শীতল করে শরীরের উপযুক্ত করে ঠিক করে। অথবা শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাপমাত্রায় নিয়ে যায়। এবং একই সঙ্গে এই বাতাসের আর্দ্রতাটা কেমন হবে, কোন আর্দ্রতায় গেলে পরে ফুসফুস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে, সেটিও কিন্তু এই নাক করে।
আরেকটি জিনিস হলো নেজাল সাইকেল বলে একটি কথা রয়েছে, নাকের যে দুই নাসারন্ধ্র, এরা কিন্তু পালাক্রমে কাজ করে। এখন কী হয়? একটি কথা বলা হয়ে থাকে, আমাদের প্রত্যেকেরই নাকের হাড় কিছু না কিছু বাঁকা। কারোই নাকের হাড় এক সমান হয় না। এটি নিয়েই আমরা চলি, জীবনযাপন করি। কিন্তু যখন ঋতু পরিবর্তন হয়, তখন দেখা যায়, এই যে এয়ারকন্ডিশনিংয়ের বিষয়টি, এটিতেও একটি পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে একটি জিনিস যুক্ত হয়, সেটি হলো অ্যালার্জিক অবস্থা। শীতে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কমে যায়। ধুলা-বালি, ফুলের রেণু বাতাসে অনেক বেশি থাকে। এই সময় নাকটা বন্ধ হয়ে যায়। আবার যাদের নাকের হাড় বাঁকা রয়েছে, তাদের দেখা যায় এয়ারকন্ডিশনিংয়ের জায়গায় বাড়তি একটি কাজ করতে হয়। এতে রোগীরা হঠাৎ করে বলে আমার নাকটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে আসছে। নাকটা যখন বন্ধ হয়ে আসে, নাকের সঙ্গে সম্পর্কিত জায়গা, গলা, কান এগুলোতে সমস্যা হয়। এই সময় অনেকে বলে, আমি একটু ঠান্ডা খেলাম। এত দিন আমার কিছু হলো না, এখন তো গলাটা একটু ব্যথা করছে। টনসিলের প্রদাহটা কিন্তু এই সময় আমাদের বেড়ে যায়।

**ঠান্ডা থেকে কানে যে সব সমস্যা হয়ঃ

যখন ঠান্ডা লাগল, ঠান্ডা লাগার পরে আমাদের এই যে ইনস্টেটিশিয়ান টিউব রয়েছে, সেই টিউটা ব্লক হয়ে সেখান থেকে দেখা যায় সর্দি ঢুকে যায়। সর্দি ঢুকে গিয়ে মধ্যকর্ণে প্রদাহ করে। এটা একটি তীব্র ব্যথার জন্ম দেয়। একটি সময় দেখা যায়, যখন কানে পর্দা ফুটো হয়ে পানি বের হয়ে আসে, তখন হয়তো ব্যথা একটু কমে, তবে এরপর তার কানটা বন্ধ বন্ধ লাগে। কানটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। তবে এটি থেকে তিনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ না নেন, ঠিকমতো, সঠিক মাত্রায় ওষুধ না খান, কারণটা না খুঁজেন যে কেন তার হচ্ছে, এটা তার পরে কানের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হবে। একে বলা হয় ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া। তাছাড়া শো শো শব্দ হতে পারে, ব্যাথা হতে পারে, হঠাত করে কানে না শোনার মতন সমস্যা হতে পারে এগুলার যে কোনো একটি দেখা দিলেই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে

**সাইনোসাইটিসের সমস্যাঃ

এই আবহাওয়াতে, এতে সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা খুব বেড়ে যায়। সাইনোসাইটিস প্রচণ্ড ব্যথাদায়ক। দেখা যায় তীব্র মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, কপালে ব্যথা। মনে হবে যেন মাথার ভেতরে পানি জমে আছে
মধ্য বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। অনেকে ডাক্তার এর শরণাপন্ন না হয়ে সাইনোসাইটিসের সমস্যা কে মাইগ্রেন এর সমস্যা মনে করে মাথা ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নেন। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত কিছু না করাই শ্রেয়।

এছাড়া গলা ব্যাথা,টনসিল, স্বরভঙ্গ,ইত্যাদি সমস্যা এসময় বেশি দেখা যায়।

**শীতে নাকের সমস্যাঃ

দীর্ঘদিন ধরে অনেকের নাকে যদি অ্যালার্জিজনিত হাঁচি, সর্দি এসব সমস্যা লেগে থাকে। এটাকে সাধারণত,বলা হয় ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’। এই রাইনাইটিসের জন্য নাকের মধ্যে যে স্বাভাবিক মিউকোসাল সারফেজগুলো থাকে, সেগুলো ফুলতে থাকে। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় কিছু পলিপয়েড টিস্যু, যাকে ‘নেজাল পলিপ’ বলা হয়।  দীর্ঘদিন নাক বন্ধ থাকলে, আমাদের সাইনাস যেগুলো থাকে, যেখানে বাতাস থাকার কথা, সেখানে ইনফেকশন হয়ে যায়। ইনফেকশন হলে তখন এটাকে  সাইনোসাইটিস বলা হয়

**শিশুদের সমস্যাঃ
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো টনসিলে সমস্যা থাকেই। বাচ্চাদের তো আপনি রোধ করতে পারবেন না। ঋতু পরিবর্তন তো তার মাথায় অতটা কাজ করে না। আরেকটি বিষয় হয়, সন্ধ্যার সময় আমরা যে ফ্যান বা এসি চালু করি, ভোররাতে কিন্তু কক্ষ তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। তখন নাকের এয়ারকন্ডিশনের কাজটা অনেক করতে হয়। সমন্বয় রক্ষা করতে গিয়ে সে হাপিয়ে ওঠে। এদের কিন্তু খুব সহজে সংক্রমণ হয়।আরেকটি হয়, অ্যাডিনয়েড। অ্যাডিনয়েড যে কেবল শীতে হয়, তা নয়। যেসব শিশুর টনসিলে প্রদাহ, তাদের অ্যাডিনয়েড হতে পারে।
দেখা যায়, যেসব বাচ্চার অ্যাডিনয়েড খুব বেশি বড়, এদের কিন্তু এই আবহাওয়ার পরিবর্তনটা আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করে। তখন দেখা যায় শ্বাসের কষ্ট হয়, মুখ হাঁ করে শ্বাস নিচ্ছে। তার ঠান্ডা লাগছে।   তখন দেখা যায়, এসব রোগীরা দুর্বল হয়ে যায়। এদের শারীরিক বিকাশও কিন্তু কম হয়। কান আক্রান্ত হয়। এদের কানের পর্দার পেছনে পানি জমে। একটি শ্রুতি বধিরতা তৈরি হয়। দেখা যায়, এদের স্কুলের কার্যক্রম খারাপ হয়ে যায়। অনেক শব্দ দিয়ে টেলিভিশন শোনে। কারণ, শব্দতো সে শুনতে পায় না। এ ধরনের শিশুদের দ্রুত নাক কান গলা চিকিৎসক এর নিকট নিয়ে যেতে হবে

নাক কান গলার সমস্যা গুলোকে হাল্কা ভাবে না দেখে সমস্যা হওয়া মাত্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। একজন অভিজ্ঞ নাক কান গলার বিশেষজ্ঞ ই পারেন নাক কান গলার সঠিক চিকিৎসা দিতে