দেশ-জনগণের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অবিচল: তথ্যমন্ত্রী

থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জন্মলগ্ন থেকে অকুতোভয়ে কাজ করে আসছে এ দল। আমরা আপস করি না, আপস করতেও জানি না। দেশের প্রশ্নে, জনগণের প্রশ্নে, রাষ্ট্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সবসময় অবিচল।

শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংসদের (বাচসাস) নতুন কমিটির অভিষেক ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পালানোর ইতিহাস তো বিএনপির। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। বলে গেছেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না। তার সঙ্গে আরও অনেকেই পালিয়ে গেছেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ শুধু সরকারের নয়, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ দেশের সব পেশার মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আগের তুলনায় আরও শাণিত হয়েছে। এ কারণে বিএনপির গাত্রদাহ। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। যে দলের মহাসচিব বলে পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে তা সহজেই অনুমেয়। তারা আসলে পাকিস্তানের পক্ষে।’

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে করা এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সরকার ও জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা থেকে বিএনপি যদি বিরত থাকে, তাহলে তাদের সভা-সমাবেশ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার এক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করছে এবং সেই কারণেই তারা সমাবেশ করতে পারছে।

তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে হামলা করা হয়েছিল, ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।’

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, আওয়ামী লীগ অফিসের দুই পাশে কাঁটাতারের স্থায়ী বেড়া ছিল। তার বাইরে আমাদের যেতে দেওয়া হতো না। তখন শেখ হেলাল এমপিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার জনসভায় হামলা করা হয়েছিল। এতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় হামলা হয়েছিল। এস এম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের জনসভায় হামলা করে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

‘বিরোধী দলে থাকতে আমাদের শত শত নেতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির সমাবেশে তো বোমা বা গ্রেনেড দূরে থাক, একটি পটকাও তো ফোটেনি’ বলেও উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।

এর আগে বক্তৃতায় বাচসাসের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা তাদের লেখনী ও চিত্রের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তথ্যমন্ত্রী।

বাচসাস সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মোল্লা জালাল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী পাভেল রহমান, চিত্রনায়ক ওমর সানী ও বাচসাস সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ প্রমুখ।

‘বাচসাস সম্মাননা ২০২২’-এভূষিত যারা
সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাবেয়া খাতুন (মরণোত্তর), সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক (মরণোত্তর), একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মরণোত্তর), বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী (মরণোত্তর) সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক জাগরণে অনবদ্য অবদানের জন্য লিয়াকত আলী লাকী, সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানে আনিসুল হক, নাটক ও চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানে মাসুম রেজা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক ও বাচসাস সদস্য পাভেল রহমান সম্মাননা পেয়েছেন।

এছাড়া চলচ্চিত্র শিল্প ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, টিভি সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মোজাম্মেল বাবু, চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিশেষ অবদানে হাবিবুর রহমান খান, হাসিনা: এ ডটার’স টেল চলচ্চিত্রের জন্য পিপলু আর খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, চারুশিল্পী, অভিনয় ও নির্দেশনায় আফজাল হোসেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখার জন্য চিত্রনায়ক শাকিব খান ও সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী কোনাল ও ইমরান মাহমুদুলকে সম্মাননা দেওয়া হয়।