• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আগুন-সন্ত্রাসের বিচার চান ভুক্তভোগীরা

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২২  

অগ্নিসন্ত্রাসে কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ সন্তান। আবার কেউ হামলার শিকার হয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। কেউ বা হারিয়েছেন চাকরি। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাসের স্মৃতিচারণ করেছেন ঐ নির্মম ঘটনার শিকার আহতরা এবং নিহতদের স্বজনরা। এ সময় সন্তানের লাশ দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপের কথা বলেন সন্তানহারা মা। চোখের সামনে পুড়ে ছারখার হতে দেখা সন্তানকে বাঁচাতে না পারার কষ্টের কথা জানান অসহায় পিতা। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে স্বামীকে কেন পিটিয়ে হত্যা করা হলো—সেই প্রশ্ন তোলেন স্বামীহারা স্ত্রী। প্রত্যেকেই এসব নির্মম হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইলেন। নিজেদের জীবদ্দশায় ঐ বিচার দেখে যেতে চান তারা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপনকারী এসব পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনুদান ও জীবিকার ব্যবস্থাও চেয়েছেন। তাদের আবেগঘন বক্তব্যে ভারী হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠানস্থল। এসময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।


গতকাল রবিবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের চিত্র ছিল এমন। বিএনপি-জামায়াতের টানা আন্দোলনের সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আংশিক চিত্র তুলে ধরতে আওয়ামী লীগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকাস্থ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে বাসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া নাহিদের মা রুনি বেগম বলেন, ‘শাহবাগে আমার সন্তানরে পেট্রোলবোম দিয়ে পুড়ায় মারছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম। আমার সন্তানকে দেখতেও পারি নাই।’ এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরে দেখার সুযোগ দেয় নাই বিএনপি ও জামায়াত। এ কারণে আজও আমি অসুস্থ। সেই ঘটনায় আমি বিচার পাই নাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার মা, আমি আপনার সন্তান। আপনি  বিচার করবেন।’ ঐ ঘটনার পর কোনো সহযোগিতাও পাননি বলে জানান এই নারী।

গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় বালক মনির হোসেন। তার বাবা রমজান আলী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি তো কোনো রাজনীতি করি না। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমার চোখের সামনে, ছোট ছেলেটাকে তারা আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দিল, কিন্তু আমি বাঁচাতে পারলাম না। এর চেয়ে কষ্ট পৃথিবীতে কোথাও নাই।’ তিনিও এই হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

কাঁচপুরে নিহত বিজিবির সুবেদার নায়েক শাহে আলমের স্ত্রী নাসরিন আক্তার আলেয়া বলেন, ‘আমার স্বামী তো রাজনীতি করেনি। সে তো দেশের কাজে নিয়োজিত ছিল। তাকে কেন এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীকে যারা এভাবে হত্যা করেছে, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই।’

অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী গোপালগঞ্জে চাকরি করত। সেখান থেকে কাঁচপুর এলে হেফাজত বাহিনী আমার স্বামীরে হত্যা করছে। এর বিচার আমি চাই।’

২০১৩ সালের মার্চে রাজশাহীর সাহেব বাজারে বোমা হামলায় আহত পুলিশের এসআই মকবুল হোসেন বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের নিক্ষিপ্ত বোমায় আমার দুটি হাত হারিয়ে ফেলি। আমি আহত হয়েছি, পঙ্গু হয়েছি, কিন্তু মনোবল হারাইনি। নামে-বেনামে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দরখাস্ত দিয়ে আমার পদোন্নতি আটকে দিয়েছে। জামায়াতের বিভিন্ন সাংবাদিক পুলিশের মনোবল নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমরা মানুষের জানমাল রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত।’

২০১৩ বাসে আগুন দেওয়া হলে তাতে আহত হন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দোকান কর্মচারী সালাউদ্দিন। সে দিনের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছালে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। সেই হামলায় আমার মুখ ও হাত পুড়ে যায়। আমার কাজ করার শক্তি আছে, কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। আমার দুইটা ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের একটা কিছুর ব্যবস্থা করুন। আমাকে একটু কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’

চট্টগ্রামের ফটো সাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না সে দিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘সে দিন আমার কাছে একটা ফোন আসে যে তারা পেট্রোল বোমা বিতরণ করছে। তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়া করে ছুরিকাঘাত করে। বিএনপি-জামায়াত এখন আবার শুরু করেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্ত। আমি হাইকোর্ট থেকে বাসায় যাওয়ার সময় বাসটি যখন শাহবাগের শিশুপার্ক এলাকায় এলো তখন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। আমার হাত মাকড়সার জালের মতো পুড়ে যায়। আমি এখনো সেই যন্ত্রণা নিয়ে চলছি। আমাদের সবার আকুতি, জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের বিচার চাই। প্রয়োজনে আমি সাক্ষী দেব।’