• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশে পিপিপি : একটি অনন্য উদ্যোগ

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২  

বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ধারণা খুব প্রচলিত নয়। উন্নয়ন খাতে বলতে গেলে অনেকটা নতুন ধারণা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেছিলেন যে, সরকারের একার পক্ষে দ্রুততার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের অর্থ এবং তাদের সুদক্ষ পরিচালনা ও উদ্ভাবনী সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে দেশের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবা সৃষ্টি/প্রদান করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহণ করার পরপরই জননেত্রী পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক ও যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘Private Sector Infrastructure Development Project (PSIDP)’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে এসব প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য তিনি Infrastructure Development Company Limited (IDCOL) নামে অর্থসংস্থান প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।


প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাসমূহকে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং দরপত্র ও চুক্তিপত্র প্রণয়নসহ চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত নানাবিধ সহায়তার জন্য ১৯৯৯ সালে সরকারি মালিকানায়  Infrastructure Investment Facilitation Centre (IIFC) স্থাপন করা হয়। এসব উদ্যোগ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সরকারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। PSIDP-র সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে Private Sector Infrastructure Guideline ( PSIG) প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত গাইডলাইনটি যথেষ্ট পূর্ণাঙ্গ ছিল না। যেমন:১. প্রাথমিকভাবে প্রকল্প গ্রহণে কোন প্রতিষ্ঠানের কী ভূমিকা হবে সেটা স্পষ্ট ছিল না। ২. বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য সুস্পষ্ট ফ্র্রেমওয়ার্ক ছিল না। ৩. প্রকল্প চিহ্নিতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, মূল্যায়ন ও অনুমোদনের জন্য সুসংহত ও সুব্যাখ্যাত কোনো পদ্ধতি ছিল না। ৪. পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন পক্ষের কী ভূমিকা তা স্পষ্ট ছিল না।

উপরোক্ত কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে পিপিপি প্রকল্প গ্রহণে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে ২০০৪ সালে গাইডলাইনটি প্রণীত হওয়ার পর উল্লেখ করার মতো পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। অতঃপর ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রণয়ন করা হয় Policy and Strategy for PPP-2010। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পিপিপি অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিপিপি অফিসের জন্য পিপিপি বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়। কয়েক জন যুগ্মসচিব ও উপসচিব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজার ও ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন (Procurement Guidelines for PPP Projects Ges Guidelines for Unsolicited Proposals) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়।

২০১০-২০১৫ সাল অবধি প্রায় ৩২টি প্রকল্প পিপিপি পাইপলাইনে যুক্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে সফল হেমোডায়ালাইসিস প্রকল্প। প্রকল্পটি কিডনি রোগীদের স্বল্প ব্যয়ে উন্নতমানের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (NIKDU) এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত ডায়ালাইসিস কেন্দ্র দুটিতে সেবার ব্যয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত
এবং সেবার মান যে কোনো ব্যয়বহুল হাসপাতাল থেকে কোনো অংশে কম নয়। উপরন্তু, প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর ঢাকায় বেসরকারি ডায়ালাইসিস কেন্দ্রগুলোর ডায়ালাইসিস ফি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ভারতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Sandor Ltd বেসরকারি অংশীদার হিসেবে ডায়ালাইসিস কেন্দ্র দুটি তৈরি ও পরিচালনা করছে। সেবার মান ভালো হওয়ায় কেন্দ্র দুটি কিডনি রোগীদের আস্থার জায়গা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে KPMG কর্তৃক World Markets Report-এ বিশ্বব্যাপী প্রথম সারির ১০০টি অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে এই প্রকল্পকে ‘Pioneering Project’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঢাকা সিটির অভ্যন্তরে যানজট নিরসন করতে ২০১০ সালে সেতু বিভাগ কর্তৃক পিপিপি পদ্ধতিতে ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।

একই সময়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার মধ্যে ঢাকা বাইপাস এবং রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যেসব যানবাহন সিলেট ও পার্শ্ববর্তী জেলা এবং কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অভিমুখে যাবে, সেই সব গাড়ি গাজীপুর থেকে ভুলতা হয়ে বিভিন্ন জেলায় গমন করতে পারবে। অ্যাকসেস কন্ট্রোল হওয়ায় যানবাহনসমূহ গাজীপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত কোনো রকম সিগন্যালের সম্মুখীন হবে না। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যান ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে, পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনও অনেক সহজ হবে। এমনকি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চলাচলকারী যানবাহনকে ঢাকার মধ্যে ঢোকার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে এই প্রকল্পের অগ্রগতি ২৩ শতাংশ। রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক প্রকল্পটির নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর মধ্য ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করার প্রয়োজন হবে না, যা ঢাকার যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Policy and Strategy for PPP-2010 প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সফলতার ধারাবাহিকতায় দেশি ও বিদেশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে পিপিপিকে জনপ্রিয় এবং সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে আস্থা সুদৃঢ় করার জন্য একটি সুসংগঠিত ও বলিষ্ঠ আইনি কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতদুদ্দেশ্যে পিপিপি আইন, ২০১৫ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। পিপিপি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরবর্তীকালে পিপিপি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনসমূহ সংশোধন করা হয়। পিপিপি আইন, ২০১৫ মোতাবেক পিপিপি অফিসকে পিপিপি কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করা হয়। ২০১৬ সালে পিপিপি কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ শুরু করার পর পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাসমূহ অধিকতর আগ্রহী ও উদ্যোগী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোক্তারাও পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। বলিষ্ঠ আইনি কাঠামোর কারণে বিদেশি উদ্যোক্তারাও পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

পিপিপি আইনি শক্তিশালী করার পর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে যেমন আস্থা তৈরি হয়; তেমনি সরকারি দপ্তর, সংস্থা নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে বিভিন্ন খাতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রকল্প পিপিপি পাইপলাইনে যুক্ত হয়। সড়ক পরিবহন-পোর্ট ছাড়াও বিভিন্ন খাতের অনেক প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে পিপিপি পাইপলাইনে ৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে। বেসরকারি তহবিল এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ব্যবহারকল্পে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সামুদ্রবন্দরে কয়েকটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল উল্লেখযোগ্য। বে-টার্মিনালের তিনটি টার্মিনালের মধ্যে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য স্বনামধন্য দুটি বিদেশি কোম্পানিকে কার্য প্রদানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। টার্মিনাল দুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে বন্দর পরিচালনায় বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করবে। এছাড়া পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পিপিপি ভিত্তিতে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় গভার্নিং বোর্ডের সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক প্রকল্পসমূহ পিপিপিতে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে  পর্যটনসহ বিভিন্ন সংস্থার বেশ কিছু প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিএমসি তার লোকসানে থাকা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৬টি মিল পিপিপির মাধ্যমে পুনঃচালুকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিলগুলো চালু হলে বস্ত্র খাতে একটি পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। সুতাসহ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিসের আমদানিনির্ভরতা কমে যাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অনন্য উদ্ভাবন জিটুজি পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালা। এই নীতিমালার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরকারী দেশের সঙ্গে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব। এই নীতিমালার সবচেয়ে সুবিধা হলো অপর দেশের বিশেষ সক্ষমতাকে এ দেশে কাজে লাগানোর সুযোগ।