• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পিরোজপুর সংবাদ
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

গোয়েন্দার চোখে চোখে চনপাড়ার চার গ্যাংস্টার

পিরোজপুর সংবাদ

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা রহস্যের গিঁট খুলতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চালাচ্ছে নানামুখী তৎপরতা। আলোচিত এ হত্যার ঘটনায় ডেমরা-রূপগঞ্জসংলগ্ন চনপাড়ার চার গ্যাংস্টার রয়েছেন গোয়েন্দাদের চোখে চোখে।

তাঁরা হলেন রায়হান, নূর জামাল, মাল্টা রনি ও মুজাহিদ। পাশাপাশি চনপাড়াকেন্দ্রিক মাদক চক্রের এক নারীসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সন্দেহভাজনদের ধরতে ধারাবাহিক অভিযানে রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। এদিকে গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেছেন, 'বুয়েট ছাত্র হত্যার ঘটনায় এখনও কংক্রিট তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা এ কথা এখনও বলছি না, মাদকের কারণে সে খুন হয়েছে। আবার ফারদিনের বন্ধুকে (আমাতুল্লাহ বুশরা) আমরা গ্রেপ্তার করেছি- তিনিই খুন করেছেন, সেটিও আমরা বলছি না। আমরা পারিপার্শ্বিকতা, বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিশ্নেষণ করছি। সব বিষয়, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্নেষণ করছি। ঢাকা শহরে তাঁরা যেখানে যেখানে গিয়েছেন, আমরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল মাধ্যমে সেগুলো খুঁজে বের করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ফারদিনের মোবাইল ফোনের ডাটা অ্যানালাইসিস করে সে কার কার সঙ্গে কথা বলেছে, সবকিছু মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ঢাকা শহরের কোনো এক জায়গায় খুন হতে পারে। মোবাইলের লোকেশনে আমরা নারায়ণগঞ্জও পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে সবকিছু বলতে পারছি না।'

৪ নভেম্বর রাতে ফারদিনের সর্বশেষ মোবাইল ফোনের অবস্থান ছিল চনপাড়ায়। এটি রাজধানীর ডেমরা ও নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জসংলগ্ন এলাকা।
 

হত্যা রহস্যের জট খুলতে ফারদিনের গতিবিধির খোঁজখবর নিতে প্রযুক্তিগত তদন্তের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ৪ নভেম্বর রাত ছাড়াও ১ ও ২ নভেম্বর দিনে চনপাড়াসংলগ্ন এলাকায় তাঁর অবস্থান পাওয়া গেছে। সেখানে কী কারণে তিনি গিয়েছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চনপাড়া বস্তির একাধিক বাসিন্দা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছেন, ৪ নভেম্বর রাতে বস্তির ৪ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগ সড়কের পাশে আল-আমিন স্কুল ও আল-আরাফা মাদ্রাসার পাশে একটি বাসায় তাঁরা হট্টগোলের আওয়াজ পান। সেখানে কাউকে জিম্মি করে পেটানোর শব্দ তাঁরা শুনেছেন। ওই এলাকায় মাদক স্পট চালান মনু নামের এক নারী। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ওই নারীকে খুঁজছে।

এদিকে, শীতলক্ষ্যা থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পরদিন ৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদরের সরকারি তেল ডিপো যমুনা ঘাটের পেছনে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অচেনা এক যুবকের লাশ মেলে। তাঁর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পরনে কালো রঙের ট্রাউজার ও ছাই রঙের গেঞ্জি ছিল। ওই লাশ শুক্রবার পাগলা শাহি মসজিদ এলাকায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের পাগলার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শারজাহান আলী বলেন, লাশ পচে গলে যাওয়ায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে। ওই যুবকের মাথা, কপাল ও চোখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ক্ষতস্থানগুলোতে সেলাই রয়েছে।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকা থমথমে। রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন বাহিনীর চিহ্নিত সদস্যরা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়েছেন। চনপাড়া বস্তিতে গতকাল বাইরের মানুষের আনাগোনাও ছিল কম। তবে থেমে নেই মাদক বেচাকেনা। আগে যেখানে প্রকাশ্যে মহল্লার গলিতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করা হতো, সিটি শাহীনের মৃত্যুর পর কৌশল বদলেছে বিক্রেতারা।

স্থানীয় লোকজন জানান, চনপাড়ার ৮ নম্বরের বাসিন্দা মনুর বাসায় বসে মাদকের আসর। মনু মাঝেমধ্যে ভোরে চনপাড়া থেকে চার-পাঁচ তরুণীকে অটোরিকশায় করে রূপগঞ্জের নাওরা এলাকায় নিয়ে যান। দিনভর থাকার পর আবার ফিরে আসেন বাসায়।

চনপাড়া এলাকার এক অটোরিকশা চালক গতকাল জানান, তাঁর বাসা এই এলাকাতেই। গলিতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। প্রতিবাদ করতে পারেন না তিনি। তিনি জানান, এত দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ইয়াবা, ফেনসিডিল বিক্রি হলেও গতকালকে বিক্রেতাদের একটু কৌশল নিতে দেখেছেন তিনি। এলাকায় ক্রেতা এলে বাসা থেকে চাহিদামতো মাদকদ্রব্য এনে দিচ্ছে বিক্রেতারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়ায় মাদক কেনাবেচাসহ বিভিন্ন কারণে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এক পক্ষের সঙ্গে আরেক পক্ষের দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। মাঝেমধ্যেই মারামারি হয়। তবে মাদক কারবারি যে-ই হোক, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (চনপাড়া এলাকা) মেম্বার বজলুর রহমানকে চাঁদার টাকা দিতেই হবে। তাঁকে টাকা না দিয়ে কারও ব্যবসা চালানোর উপায় নেই। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চনপাড়ায় এক-দেড় বছরের মধ্যে ছয়জন খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরার বাসা থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে যেতে বের হন ফারদিন। পরদিন তাঁর পরীক্ষা থাকলেও তিনি অংশ নেননি। খোঁজখবরের একপর্যায়ে জানা যায়, বুশরাকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন তিনি। এরপর ওই ঘটনায় রামপুরা থানায় জিডি করা হয়। গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে মেলে এক লাশ। পরে শনাক্ত হয় লাশটি ফারদিনের। গত বৃহস্পতিবার বুশরার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ফারদিনের বাবা। মামলায় পাঁচ দিনের হেফাজতে রয়েছেন ওই তরুণী।